
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর নামের এক অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে মারুফ মোল্যা। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তবে তার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা গ্রামকে। নিজের হাতে তৈরি প্যারাগ্লাইডার নিয়ে যখন তিনি আকাশে উড়লেন, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন সবাই।
ছোটবেলা থেকেই আকাশে উড়তে ইচ্ছে করত মারুফের। সেই ইচ্ছে ডানা মেলেছিল কক্সবাজার ভ্রমণের পর। প্যারাসেইলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। দারিদ্র্য জর্জরিত সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। তাই এসএসসি পাশের পর আর লেখাপড়া হয়নি। কিন্তু মারুফের অদম্য মনোবল আর আকাশ ছোঁয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কোনো বাধাই মানতে চায়নি।
প্যারাগ্লাইডার তৈরির পথে বহু বাধা এসেছে। ইউটিউবে ভিডিও দেখে আর পুরোনো যন্ত্রাংশ জোগাড় করে দিনের পর দিন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন মারুফ। প্রায় ছয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে ধরা দেয় সাফল্য। শুরুতে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছিলেন, নানা সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু মারুফের তৈরি প্যারাগ্লাইডার যখন আকাশে উড়ল, তখন সমালোচনার মুখ বন্ধ হয়ে গেল, আনন্দের ঢেউ উঠল এলাকাজুড়ে।
স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকেই উদ্ভাবনী ক্ষমতা ছিল মারুফের। টুকটাক কিছু না কিছু বানাতেন সবসময়। কিন্তু হঠাৎ করে তাকে প্যারা গ্লাইডারে উড়তে দেখে অবাক হয়েছিলেন সবাই। এখন গ্রামের অনেকেই মারুফের সাফল্যে গর্বিত। শুধু প্যারাগ্লাইডারই নয়, মারুফ এর আগে এয়ার কুলার ও ইলেকট্রিক্যাল থেরাপি মেশিনও তৈরি করেছেন। হাত-পা ঘামা রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী হতে পারে।
স্থানীয় স্কুলছাত্র বিল্লাল হোসেন জানান, তাদের চরাঞ্চল এবং পদ্মা নদীর তীর প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময় স্থান। কক্সবাজারের মতো এখানেও প্যারাগ্লাইডার উড়িয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যেতে পারে। এতে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতিও সম্ভব।
স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদ হোসেন সজিব বলেন, “মারুফ প্যারাগ্লাইডার বানিয়ে আকাশে ওড়ার পর এলাকার মানুষের মাঝে সত্যিই আনন্দ দেখা যাচ্ছে। তার ওড়ার খবর শুনে আমিও দেখতে এসেছি। এমন প্রতিভা গ্রামে লুকিয়ে আছে, এটা দেখে ভালো লাগছে।”
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে মারুফ মোল্লা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আকাশে উড়তে ইচ্ছে করত। প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় আমি সফল হয়েছি। বিদেশ থেকে প্যারামোটর আনতে প্রায় নয় থেকে দশ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু আমি মাত্র এক লাখ টাকায় এটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। যদি সরকারের সহযোগিতা পাই, তবে আরও বড়মাপের প্যারাগ্লাইডার তৈরি করব এবং এটি বাজারজাত করব।”
Comments