প্রতি বছর প্রতি শিক্ষার্থীকে দিয়ে হয় ১০০ টাকা
কলেজ বাস না থাকলেও বছরে খরচ ৯ লাখ টাকা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভর্তির কোন খাতে কত টাকা দিচ্ছে তা কখনোই দেখা বা জানার সুযোগ পায়না শিক্ষার্থীরা।এমনকি সাধারণ যারা শিক্ষক রয়েছেন তাদের কাছেও বিষয়টি অজানা! তাইতো সুযোগ সুবিধা ভোগ না করেও প্রতি বছর বিভিন্ন খাতে লাখ লাখ টাকা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বরাবরই দোষ চাপিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপর। এমন অনেক খাত রয়েছে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। যেগুলো নাকি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়।
তার মধ্যে একটি হচ্ছে পরিবহন খাত। কলেজে পরিবহন সুবিধা না থাকলেও প্রতি বছর প্রতি শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ১০০ টাকা করে। কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮,৮৩৭ জন। প্রতিজন ১০০ টাকা করে দিলে বছরে এ খাতে নেয়া হচ্ছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। যেহেতু শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো পরিবহন সুবিধা নেই, তাহলে এই টাকা যাচ্ছে কোথায়? এমন প্রশ্ন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরজমিনে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে গেলে দেখা যায়, সারি সারি নিজস্ব পরিবহন যেগুলোতে নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা যাতায়াত করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু তারই মধ্যে হঠাৎ দেখা যায় কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সামনে পার্কিং অবস্থায় রয়েছে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসটিতে নীল কালিতে লেখা রয়েছে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।
উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে গাড়িটি কে ব্যবহার করেন জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, গাড়িটি দিয়ে শুধুমাত্র আমাদের অধ্যক্ষ স্যার যাতায়াত করেন।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন আছে কিনা জানতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকটা হতাশা নিয়েই বলেন, সাত কলেজের প্রতিটি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পরিবহন থাকলেও আমাদের কলেজে কোনো পরিবহন নেই। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো পরিবহন পায়নি সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থীরা।
পরিবহন খাতে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন খাতে কত টাকা নিচ্ছে সেটা কখনোই আমাদের দেখানো হয়না। তাহলে কিভাবে বুঝবো যে আমাদের কাছ থেকে পরিবহন খাতে টাকা নিচ্ছে কিনা!
তাহলে কি অধ্যক্ষের ব্যবহৃত একটি গাড়ির পিছনেই বছর ৯ লাখ টাকা খরচ হয়? সে প্রশ্নের উত্তর খুজতে কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, গাড়িটির পিছনে কত টাকা খরচ হচ্ছে সেটা বলতে পারবো না, তবে কলেজের ড্রাইভারের মাসিক বেতন ১৬ হাজার ৯০০ টাকা। তাছাড়া প্রতিদিন গ্যাস খরচ এবং মাঝে মধ্যে মেরামত বাবদ কিছু টাকা খরচ করতে হয়।
ড্রাইভারের বেতন হিসাব করলে বছরে ড্রাইভারকে বেতন বাবদ দেওয়া হয় ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ৯ লাখ থেকে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা ড্রাইভারের বেতন বাবদ খরচ হলে বাকি টাকা কি তেল আর মেরামত বাবদ খরচ হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আপনার যদি সার্বিক বিষয়ে জানতে হয় তাহলে কলেজের হিসাব নিরক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি আপনাকে সব হিসাব দিতে পারবে। এর চেয়ে বেশি আমি বলতে পারবো না।
এবিষয়ে কলেজের হিসাব নিরক্ষক শফিক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসমস্ত তথ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন। স্যারই তথ্য দিবেন।
স্যারকে ছাড়া কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্যারের অধীনে চাকরি করি স্যার যেটা বলে সেটাই।
এবিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসীন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments