Image description

টাকা কীভাবে পরিচালনা করলে তা লাভজনক হয়? যদি টাকা থেকে আরও টাকা তৈরি করা যেত, তাহলে কেমন হতো? যদি এ ধরনের ভাবনা আপনার মনে আসে, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্যই। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ‘অর্থ’ শুধুমাত্র আয়ের উপাদান নয়, এটি একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনার বিষয়। 

এখন প্রশ্ন হলো, আমরা ‘অর্থ ব্যবস্থাপনা’ বলতে আসলে কী বুঝি? অনেকেই মনে করেন অর্থ ব্যবস্থাপনা মানে শুধু খরচ কমানো। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে অর্থ ব্যবস্থাপনা একটি বিস্তৃত ধারণা। এটি শুধু খরচ নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণের বিষয়। অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো আয় ও ব্যয়ের হিসাব রাখা। এক্ষেত্রে আপনাকে ঠিক করতে হবে, আপনি দৈনিক, মাসিক না বার্ষিক হিসাব রাখবেন। 

যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ মাসিক আয়ের ভিত্তিতে চলে, তাই মাসিক হিসাব রাখা সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত। এরপর প্রয়োজন সেই হিসাব বিশ্লেষণ করা এবং একটি বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করা। বাজেট অর্থ ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। জনপ্রিয় একটি বাজেট কৌশল হলো ৫০/৩০/২০ নিয়ম, যেখানে ৫০% ব্যয় হয় প্রয়োজনীয় খাতে (যেমন ভাড়া, খাদ্য, শিক্ষা), ৩০% চাহিদাভিত্তিক খাতে (যেমন বিনোদন, কেনাকাটা), এবং ২০% সঞ্চয় ও বিনিয়োগে রাখা হয়।

সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিনিয়োগই পারে টাকা থেকে টাকা তৈরি করতে। এই ধারণাটিকেই বলা হয় ‘অর্থ থেকে অর্থ আয়’ বা নিষ্ক্রিয় আয়। অর্থ থেকে অর্থ আয় মানে হলো অর্থকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাতে সেটি নিজে থেকেই নতুন অর্থ তৈরি করে, অর্থাৎ আপনি কাজ না করেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন, এটা কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। দরকার কেবল বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য এবং ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা। 

উদাহরণস্বরূপ, ঝুঁকিমুক্ত একটি পদ্ধতি হলো ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট (ঋউজ)। নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাকা জমা রেখে সুদসহ ফেরত পাওয়া যায়। যদিও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সুদ গ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়। বিনিয়োগের আরও একটি জনপ্রিয় উপায় হলো ব্যবসা। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যবসায় ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি ভেবে পিছিয়ে গেলে অনেক সময় উন্নতির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায় বিনিয়োগ মানে হলো পুঁজি, সময় ও শ্রমের সমন্বয়ে লাভের উদ্দেশ্যে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা। খাবার, পোশাক, প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি খাত ব্যবসার জন্য চমৎকার ক্ষেত্র হতে পারে।

অর্থ বিনিয়োগের আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী ও আস্থাশীল উপায় হলো জমি বা ফ্ল্যাট কেনা। সময়ের সঙ্গে এগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি নিরিবিলি কোনো এলাকায় জমি কিনলেন। কিছু বছর পর ওই এলাকায় গড়ে উঠল স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও বাজার। তখন জমির দাম বেড়ে গেল। একইভাবে ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়েও আয় করা যায়। সোনা বিনিয়োগের আরেকটি নিরাপদ মাধ্যম। 

এটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, সহজে রূপান্তরযোগ্য এবং সময়ের সাথে মূল্য বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম স্থানান্তরযোগ্য একটি স্থিতিশীল সম্পদ। অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অর্থ থেকে অর্থ আয় করার জ্ঞান এবং তার যথাযথ প্রয়োগ একজন মানুষকে শুধু সচ্ছলই করে না, বরং আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। এই প্রসঙ্গে রবার্ট টি কিয়োসাকির একটি বিখ্যাত উক্তি মনে করা যেতে পারে, ‘তোমরা নিজেরা টাকার জন্য কাজ করো না। টাকাকে তোমাদের জন্য কাজ করিয়ে নাও।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ভাবে বেশি আয় করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু আয় বাড়ার সাথে সাথে খরচও বাড়ে। ফলে লাভের পরিবর্তে সবকিছু আবারও শূন্যে গিয়ে ঠেকে। তাই দরকার আর্থিক শিক্ষা, সচেতনতা এবং সঠিক অর্থ ব্যবস্থাপনা।’


লেখক: শিক্ষার্থী