বাংলাদেশে দারিদ্র্যের গভীরতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পরেও বাংলাদেশে দারিদ্র্যের চিত্র জটিল থেকে আরও জটিল হচ্ছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সতর্ক করে বলেছেন, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা একটি ছোট অর্থনৈতিক ধাক্কাতেও তাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার গত তিন বছরে ১৮.৭% থেকে বেড়ে ২৭.৯৩% হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন এখন দরিদ্র। চরম দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে, যা ৫.৬% থেকে এখন ৯.৩৫%।
শহরের পরিবারগুলোর গড় মাসিক আয় কমেছে (৪৫,৫৭৮ টাকা থেকে ৪০,৫৭৮ টাকা), অথচ খরচ বেড়েছে প্রায় ৪৫,০০০ টাকায়। গ্রামে আয় সামান্য বাড়লেও, খরচের ৫৫% শুধু খাদ্যেই চলে যাচ্ছে, ফলে সঞ্চয়ের সুযোগ থাকছে না।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৫%। তবে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০ থেকে কমিয়ে ৯৫-এ আনা হয়েছে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) গবেষণা অনুযায়ী, শহরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সালে ৭৪ লাখ থেকে বেড়ে ৭৯ লাখ হয়েছে। অথচ শহরের দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের মাত্র ৪% ব্যয় করা হয়।
প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বলছে, দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ আয় ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩% হয়েছে এবং বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে ৩.৯৭%-এ নেমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রকৃত দরিদ্র, অক্ষম, নারী, শিশু এবং ঝুঁকিতে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এই কর্মসূচিগুলোকে ২০-২৫টিতে একীভূত করলে এর কার্যকারিতা বাড়বে। তাদের মতে, সামাজিক সুরক্ষা কোনো দাতব্য নয়, বরং নাগরিকদের অধিকার। তাই দারিদ্র্য মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী রাজস্বনীতি এবং প্রকৃত দরিদ্রকে চিহ্নিত করার সঠিক ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য।
Comments