
“জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর” গঠনের উদ্দেশ্যে গণভবনে প্রায় ১১১ কোটি টাকার নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির নামে যেভাবে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলেছে, সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যে মানদণ্ড থাকা উচিত, তা এই প্রক্রিয়ায় গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে আরও বলেন, “জাদুঘর গঠনের জন্য গণভবনে নির্মাণকাজটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও, সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির নামে বিদ্যমান সরকারি ক্রয়নীতি ও বিধান এড়িয়ে যে প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া হয়েছে, তা অনিয়ম ও পক্ষপাতের আশঙ্কা উসকে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, জাদুঘরের জন্য দরপত্র ছাড়া সরাসরি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নীতিগত অনুমোদনের মাধ্যমে, যেখানে সরকারি ক্রয় বিধিমালার ৭৬(১) ও ৭৬(২) ধারা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সরাসরি ক্রয় শুধুমাত্র জরুরি অবস্থা, দুর্যোগ কিংবা বিশেষায়িত পণ্য বা সেবার জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং এর ব্যবহার স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বিঘ্নিত না করে হতে হবে।
ড. জামান বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াটি কোনো বিশেষায়িত ক্রয় নয়। এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক (ইএম) এবং পূর্ত খাতের প্রায় ১১১ কোটি টাকার কাজ দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, নিয়মিত এ ক্রয়ের জন্য কেন সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে? এ কাজের জন্য যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হলো তা কীসের ভিত্তিতে? কোন যুক্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচিত করা হলো; কার্যাদেশের মূল্য নির্ধারণের ভিত্তিই-বা কী? এ ক্ষেত্রে ব্যয়িত অর্থের “ভ্যালু ফর মানি” কীভাবে নিশ্চিত হবে? এ প্রশ্নসমূহের যথাযথ উত্তর ছাড়াই এভাবে কাজ দেওয়ায় প্রক্রিয়াটি কী যোগসাজসমূলক এবং পক্ষপাতদুষ্ট এমন প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে কোনো উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া কাজ প্রদান করায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ ও সদ্ব্যবহারের প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘একদিকে যেখানে সরকার দুর্নীতি দমনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের অভীষ্টের কথা বলছে, সেখানে সরকারি ক্রয়ে এ ধরনের মূলনীতি লঙ্ঘন আত্মঘাতী ও স্ববিরোধী। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর যথেষ্ট সময় থাকার পরও কেন বিলম্ব হলো, দরপত্র ছাড়া কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন কেন হলো, পুরো বিষয়টি কি উদ্দেশ্যমূলক এ ধরনের প্রশ্নের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি জানাই আমরা। টিআইবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহারে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত না হলে, সব সংস্কার ও উত্তরণের কথা কেবল লোকদেখানো হয়েই থাকবে, যার ফল হবে দুর্নীতিকে স্বাভাবিকতা প্রদানের ধারাকে অব্যাহত রাখা ও উৎসাহিত করা।’
টিআইবির প্রশ্ন, “এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত তো ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই নেওয়া হয়েছিল। তাহলে কেন উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলো না? সময় তো হাতে ছিল। প্রায় সাত মাস পরে, নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে সরাসরি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত কী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়?”
Comments