
বাংলাদেশে সাপের ছোবলে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর চার লাখেরও বেশি মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হন, যার মধ্যে প্রায় ৯৬ হাজার ৫০০টি বিষধর সাপের ছোবল। এই বিষধর ছোবলেই সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রতি বছর ১৬ জুলাই বিশ্ব সাপ দিবস পালিত হলেও, সাপের ছোবলে সৃষ্ট এই ভয়াবহ মৃত্যুর হার দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নীরব সংকট তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপের ছোবলে আক্রান্তদের ২০ থেকে ২২ শতাংশের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো সমন্বিত চিকিৎসার অভাব এবং সময়ক্ষেপণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথমে হাসপাতালমুখী না হয়ে ওঝা বা বৈদ্যের দ্বারস্থ হন, যা মূল্যবান সময় নষ্ট করে এবং রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অথচ দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা পেলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আক্রান্তকে বাঁচানো সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে হাসপাতালে সাপের ছোবলের চিকিৎসা নিতে আসা ২৪ হাজার ৪৩২ জনের মধ্যে ১১৮ জন মারা গেছেন। পরিসংখ্যান আরও বলছে, সাপের ছোবলের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বরিশালে, তবে মৃত্যুর হার বেশি পদ্মাপারের বৃহত্তর ফরিদপুর ও রাজশাহীতে, যেখানে বিষধর সাপের ছোবল বেশি দেখা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ জানান, বর্ষাকালে (জুন, জুলাই, আগস্ট) এবং সাপের প্রজনন মৌসুমে (অক্টোবর) সাপের ছোবলের ঘটনা বাড়ে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনমগুলো শত বছরের পুরোনো প্রযুক্তিতে তৈরি এবং দক্ষিণ ভারতের চার ধরনের সাপ থেকে সংগৃহীত বিষে তৈরি হওয়ায় সব ধরনের সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০ থেকে ২২ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়।
তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, দেশে অ্যান্টিভেনমের কোনো সংকট নেই। অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, বছরে ৭০ হাজার ডোজ অ্যান্টিভেনমের প্রয়োজন হলেও, বাস্তবে ২৫ হাজারের বেশি ব্যবহৃত হয় না, কারণ মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসে না।
চিকিৎসকরা বিষধর সাপের ছোবলের লক্ষণ হিসেবে দংশিত স্থান ফুলে যাওয়া, রক্তপাত, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা কালো হওয়ার কথা জানান। তাঁরা জোর দিয়ে বলছেন, সাপে কাটা ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং কোনো রকম ঝাড়ফুঁক বা কুসংস্কারের পেছনে সময় নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
Comments