Image description

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে ক্ষমা করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ করেছেন। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এই লিখিত আদেশ দেন, যা শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। আদেশের দিন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন, তবে অপর দুই আসামি পলাতক।

অভিযোগ গঠনের পর যখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষ স্বীকার করবেন কিনা, তখন তিনি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করেন। একইসাথে তিনি জানান যে, সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং এই অপরাধ সংঘটনে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পর্কে তার জ্ঞাতসারে জানা সব তথ্য ‘সৎভাবে ও সম্পূর্ণভাবে’ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। এরপর তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা প্রদানের জন্য একটি আবেদন করেন।

আদেশে এ বিষয়ে বলা হয়, প্রধান কৌঁসুলি এই শর্তে ক্ষমা প্রদানের বিষয়ে সম্মতি জানান যে- অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রদান করবেন’, যা অভিযোগের অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। ট্রাইব্যুনাল এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সাবেক আইজিপিকে ক্ষমা প্রদান করা উপযুক্ত মনে করেন এবং সেই মোতাবেক তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে। এই শর্ত অনুযায়ী, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা সব তথ্য ‘সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে’ প্রকাশ করবেন। ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত করেছে যে, ‘অভিযুক্ত এই শর্তে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তাকে সাক্ষী হিসেবে পরবর্তীতে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকবে।’

আদেশে আরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যেহেতু চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছেন, তাই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে কারাগারে অন্যান্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা প্রয়োজন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আদেশের সময়ই মামুন নিজের অভিযোগ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করেন।