
ঢাকার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে হত্যা, খুলনায় যুবদলের সাবেক নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা এবং চাঁদপুরে মসজিদের ইমামের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে এই মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নতুন প্রশাসনিক ভবন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিয়া মুনের সঞ্চালনায় বক্তারা অবিলম্বে 'মবোক্রেসি' বন্ধ এবং সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, "৫ আগস্টের পরও বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য মিছিল করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সোহাগকে হত্যার দায় যতটুকু বিএনপির, ততটুকু অন্তর্বর্তী সরকারের। অনতিবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে এসব হামলার জবাব দিতে হবে।"
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, "এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আজকের সোহাগ হত্যার জন্য দায়ী। অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, এই মবোক্রেসি থামান, সন্ত্রাসী হলেও তাদের বিচারের আওতায় আনেন।"
এর আগে একই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা, যা শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রুবেল বলেন, মিটফোর্ডে নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে চাঁদপুরের ইমাম এবং খুলনার যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় জড়িতদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনাকে কিছু রাজনৈতিক দল ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং এটি তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল হলেও বিএনপিকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। রুবেল এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন এবং জানান, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ছাত্রদল সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যার বিপক্ষে।
সমাপনী বক্তব্যে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার আশা ছিল যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো হানাহানি, খুনোখুনি থাকবে না। তারা চেয়েছিলেন একটি সাম্য এবং ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
তিনি মনে করেন, সরকার যদি প্রথম দিন থেকেই এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও 'মব কালচারের' বিচার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করত, তাহলে সন্ত্রাসীরা এমন হত্যাকাণ্ড বারবার ঘটানোর সাহস পেত না।
Comments