
জাতিসংঘের বৈশ্বিক ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা আইপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের গাজা সিটি ও তার আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজার মানুষ এখন খাদ্যের তীব্র অভাবে ভুগছেন এবং তাদের পরিস্থিতিকে খাদ্য সংকটের সর্বোচ্চ ধাপ, অর্থাৎ 'পঞ্চম ধাপ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, সেখানকার মানুষ চরম অনাহারে রয়েছেন এবং তাদের কাছে খাওয়ার মতো প্রায় কিছুই নেই।
আইপিসি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা সিটির পাশাপাশি দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনুস শহরেও খাদ্য পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই দুটি শহরেও দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে। এমনটা হলে গাজাজুড়ে প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজার মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বেন।
বর্তমানে গাজার মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ (প্রায় ১০ লাখ ৭ হাজার মানুষ) খাদ্য সংকটের জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছেন, যা 'ধাপ-৪' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ। এছাড়া, ৩ লাখ ৯৬ হাজার মানুষ (২০ শতাংশ) 'ধাপ-৩'-এ আছেন, যারা মারাত্মক খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে ১৯ লাখ মানুষ বা গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর ফলে বেশিরভাগ পরিবার অনিরাপদ ও জনাকীর্ণ পরিবেশে বাস করছে। গাজার প্রায় ৯৮ শতাংশ ফসলি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে, গবাদি পশুর সংগ্রহ শেষ হয়ে গেছে এবং মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, নগদ অর্থের অভাব এবং বাজারের আকাশছোঁয়া দাম পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করে এবং পরবর্তীতে খাদ্য সরবরাহে অবরোধ আরোপ করে, যা এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলো।
Comments