
এশিয়া জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র গরম, প্রবল বন্যা ও ভূমিধসের মতো চরম আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা এখন আরও নিয়মিত ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় এশিয়া দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হচ্ছে।
জাপানে সম্প্রতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। গুনমা প্রদেশের ইসেসাকি শহরে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের কারণে অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চরম গরমের কারণে কর্তৃপক্ষকে কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে এবং জরুরি সেবা বিভাগগুলো অসুস্থদের ফোনকলে জর্জরিত হয়েছে। তীব্র গরম থেকে স্বস্তি পেতে সরকারি দপ্তরে ড্রেস কোড শিথিল করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী দিনে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে এবং বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়াতেও জুলাই মাসে টানা ২২টি রাত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল, যা 'গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রাত' হিসেবে পরিচিত। ভিয়েতনামের হ্যানয়ে আগস্ট মাসে তাপমাত্রা প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা সেখানে নজিরবিহীন।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যখন তীব্র গরমে ভুগছে, তখন চীন, ভারত এবং পাকিস্তানে প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দিয়েছে।
সাংহাই থেকে বেইজিং পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ভারী বৃষ্টিতে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূমিধস এবং নতুন বন্যার আশঙ্কায় জরুরি সেবাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। জলাবদ্ধতার কারণে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে আকস্মিক বন্যায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন।
পাকিস্তানে বৃষ্টিজনিত কারণে জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশু। প্রবল বর্ষণে বহু বাড়িঘর এবং স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। 'সেভ দ্য চিলড্রেন' জানিয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তত এক-চতুর্থাংশ স্কুল পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, হংকংয়ে মঙ্গলবার একদিনে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১৮৮৪ সালের পর আগস্ট মাসে একদিনে সর্বোচ্চ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Comments