
অন্যান্য দিনের মতই এতিমখানার মাদরাসায় পড়াশোনা চলছিল। সেই সময় হঠাৎ ধারালো ছুরি হাতে মাদরাসার ভেতর ঢুকে পড়ে এক যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উপস্থিত শিক্ষক ও পরিচারকদের ধারালো ওই অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে সে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁ থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় মাদরাসায় নৃশংসতা চালানোর আগে এদিন সকালে নিজের মা-বাবাকে কুপিয়ে খুন করেন ওই যুবক এরপর পুলিশ আসার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান।
বনগাঁ জেলা পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোরে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহরের কাশিয়ারা কাজীপাড়া এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ছেলের হাতেই খুন হন বৃদ্ধ বাবা-মা। গলা কাটা অবস্থায় বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, নিহত দম্পতির নাম নাম মুস্তাফিজুর রহমান (৬৬) ও মমতাজ পারভিন (৫৬)। মুস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী মমতাজ পারভিনের সঙ্গেই থাকতেন তাদের ছেলে হুমায়ূন কবীর। এ ঘটনার পর থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় ছেলে। ফলে সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে ছেলের দিকে। তদন্তে নামে মেমারি থানার পুলিশ। ঠিক কী কারণে বাবা-মাকে খুন করা হয়েছে তার কারণ জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, ঘরের মধ্যে খুন করে লাশ দুটিকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসে ওই ছেলে। এদিন সকালে স্থানীয়রাই প্রথম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামী ও স্ত্রীর লাশ পড়ে আছে। এরপর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার অর্ক ব্যানার্জিও। দেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
এদিকে এদিন সন্ধ্যায় সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি হুমায়ূন কবীর রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার অন্তর্গত মতিগঞ্জ এলাকায় একটি মসজিদ পরিচালিত এতিমখানার মাদ্রাসায় ছুরি দিয়ে হামলা চালিয়ে চার জনকে আহত করে। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় বনগাঁ থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে যা বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপার (এসপি) দীনেশ কুমার। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও।
পরে ওই যুবককে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনা স্বীকার করে অভিযুক্ত ব্যক্তি। এদিকে আটক ব্যক্তির খবর পেয়েই ওই মসজিদ থেকে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ থানায় এসে অভিযুক্ত ব্যক্তি হুমায়ূন কবীরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। এতে পুলিশ বাঁধা দিলে তারা থানায় হামলা চালায়। পরে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিপেটা করে এবং ১০ জন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে।
বনগাঁ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘হামলাকারী যুবকের নাম হুমায়ূন কবীর। তার ৩৫ বছর বয়স। বাড়ি বর্ধমানের মেমারি এলাকায়। সকালে এই ব্যক্তি তার বাবা মাকে খুন করে মাদরাসায় হামলা চালায়। এই হুমায়ূন চার জনকে ছুরির আঘাতে আহত করেছে। বৃহস্পতিবার হুমায়ূন কবীর এবং থানায় হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Comments