Image description

যশোর জেলার অভয়নগর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া, মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংয়োগ, ধর্ষণ, সনাতনী মেয়ে নিখোঁজ ও ধর্ম অবমাননার কথা বলে হিন্দুদের গ্রেফতার এর প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবরে সামনে এই প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট কতৃক আয়োজিত এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করেন : বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (BSP), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন, জাগো হিন্দু পরিষদ, ভক্ত সংঘ বাংলাদেশ, ভক্ত সংঘ সোসাইটি , বাসুদেব ভক্ত সংঘ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সনাতনী অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, ঢাকেশ্বরী মাতৃসেবা সংঘ।  

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট ও সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্ত্বে উপস্থিত ছিলেন; বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট থেকে প্রসেনজিৎ কুমার হালদার, এ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়, প্রদীপ কান্তি দে, রাজেশ নাহা, সাজেন কৃষ্ণ বল, রাজ ঘোষসহ অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ, সম্মিলিত সনাতন পরিষদ থেকে সাধারন সম্পাদক প্রদীপ আচার্য, অধ্যাপক অশোক তরু, এম.কে রায়, অ্যাড. জিতেন চন্দ্র বর্মন, সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রধান প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার, অন্যতম প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, অন্যতম প্রতিনিধি রাজ ঘোষ, অন্যতম প্রতিনিধি সুশান্ত অধিকারী, অন্যতম প্রতিনিধি পুতুল, অন্যতম প্রতিনিধি অয়ন রায়, অন্যতম প্রতিনিধি আশিষ বাড়ুই, অন্যতম প্রতিনিধি ডেবিট পাল, অন্যতম প্রতিনিধি সবুজ দত্ত, অন্যতম প্রতিনিধি বাঁধনসহ সন্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ।  

বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়, নিবার্হী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, রাজেস নাহা, সাজেন বল, সমাবেশে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি এর- সাধারন সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায়, দপ্তর সম্পাদক সবুজ বৈরাগী, প্রানতোষ তালুকদার, রঞ্জিত দাশ বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র সাজন কুমার মিস্তী, রুপম সরকার, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি- সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল এবং সাধারন সম্পাদক দিলিপ বিশ্বাস, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন- সাধারন সম্পাদক সন্তোষ বিশ্বাস, ভক্ত সংঘ বাংলাদেশ এর- সভাপতি শান্তি রঞ্জন মন্ডল, ভক্ত সংঘ সোসাইটি এর- সাধারন সম্পাদক অনিল পাল, বাসুদেব ভক্ত সংঘ ফাউন্ডেশন এর-সাধারন সম্পাদক সুমন গোস্মামী পুলক, বাংলাদেশ মাইনরিটি লইয়ারস এসোসিয়েশন এর-সাধারন সম্পাদক অ্যাড. শংকর চন্দ্র দাশ, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ এর- সাধারন সম্পাদক পিজুস দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ এর সাধারন সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাশ, সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বক্তাগণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারের সংস্থা কমিশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়ন ফ্রিডম এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদন বলা হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রতিককালি টাঙ্গাইলের সখিপুরের শংকর সাহার বাড়িতে হামলা ও লুট, দিনাজপুরে শিক্ষক উপেন্দ্র নাথ রায় গ্রেফতার, সবুজ দাসকে গ্রেফতারের চেষ্টা, সিলেটে জন রিশি, প্লাবন সুত্রধর, হবিগঞ্জে রবি দাস, কমল দাস শাবি ছাত্র বিকাশ ধর, সুনামগঞ্জের আকাশ দাসকে গ্রেফতার ও হয়রানীর তীব্র নিন্দা জানাই।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের অন্যতম প্রতিনিধি ও সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রধান প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, যশোরের অভয়নগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া, মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মেয়ে নিখোঁজ ও কথিত ধর্ম অবমাননার কথা বলে হিন্দুদের গ্রেফতার ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে এবং লুট করে যে বর্বরোচিত হামলা তা স্মরনকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এই পরিকল্পিত হামলা দেখে হিন্দুদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়ে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রীমৎ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের অতি দ্রুত মুক্তি প্রদানের কথা বলেছেন। সেই সাথে যে সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের দ্রুত ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়েছেন। 

তিনি আরো বলেন এখনো যদি আট দফা নিয়ে সরকার আলোচনায় না বসেন, সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত হামলার তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ না করেন তাহলে অতিশিঘ্রই এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন। তিনি শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা বলেননি। তিনি যশোর জেলার অভয়নগরে কৃষক লীগের কর্মী তরিকুল হত্যা ও চট্রগ্রাম এ্যাডভোকেট হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 

তিনি বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব তরিকুল হত্যা ও চট্টগ্রামপর এ্যাডভোকের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জানান। তিনি বলেন অপরাধীর কোন জাত ও ধর্ম নাই। তাই তাঁকে আইনের আওতায় এনে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তির দাবি জানান। তিনি চান জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে একটি সুশীল/সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা তথা একটি বৈষম্যহীন নতুন রাষ্ট্র। 

অনিল পাল বলেন ’ অন্তবর্তী সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও রাস্ট্র পরিচালনায় ব্যার্থ। দেশে হিন্দরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ সনাতন পার্টি এর- সাধারন সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায় বলেন, হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সব ধর্মের উপর সহনশীলতা নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল। এইসব অরাজকতা দেখার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। হিন্দু সম্প্রদায় আজ নিজের দেশে, নিজের জন্মভূমিতে মর্যাদার সাথে থাকতে পারছে না, সবসময় ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। যশোরের অভয় নগরের ঘটনার দেড় কোটির টাকার সম্পদ লুট ও ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, সম্পদ চুরি ডাকাতি ও লুটপাট এই বিরাট ক্ষতির মূল্য কে দেবে?। এখানো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয় নাই। প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। প্রতিটি ঘটনার পরে কয়েকজন গ্রেপতার হয় এরপরে আবার জামিন পেয়েই বাদীদের উপর অধিকমাত্রায় অত্যাচার/চাপ বেড়ে দিয়ে মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতায় পরিণত হয়। কোন বিচার আর হয় না। তাই এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এইসব ভাংচুর/অত্যাচারের সত্বেও বিচার না হওয়ায় মনে হচ্ছে যে সরকার অসাম্প্রদায়কতার হাত ধরে দেশ চালালেও সরকারের কেউ কেউ মৌলবাদীদের আঙ্গুল ধরে আছে। ঠাকুরগাও শহরে ৩ টি হিন্দু মেয়ে নিখোজ। মানিকগঞ্জে মন্দির ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ, বগুরায় সাথী রানী নিখোজ, নবীগঞ্জে গনেশ ঠাকুর ভাংচুর, খুলনার পাইক গাছা মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত, মাদারীপুরে ২০০ বছরের হিন্দুদের গাছ কেটে ফেলা, বরিশালে বাকেরগঞ্জে মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত, পাবনার আমিনপুরে মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত লক্ষ্মিীপুরের রামগতিতে মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত, নীলফামারির ডোমারে হিন্দু যুবককে নির্যাতন পিরোজপুরে নাজিরপুরে মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত, চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মন্দির ভাংচুর ও লুটপাত বিগত ৩০ দিনের ঘটনা এই। এখনই যদি এই সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না করা যায় তাহলে ১ বছরে কি মারাত্মক অবস্থা ধারন করবে তা বলার অপেক্ষা রাখবে না।