Image description

বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল এক অপার সৌন্দর্য ও জীবন্ত অনুভূতির নাম। আষাঢ়-শ্রাবণের অবিরাম বর্ষণে যখন গ্রামের মাঠ-ঘাট, বিল-জলাশয় ভরে ওঠে, তখন বাংলার চাষের জমিগুলো পরিণত হয় মাছ ধরার এক প্রাণবন্ত মঞ্চে। বিশেষ করে আমন ধানের ক্ষেত ও নিচু জমিগুলোতে জমে থাকা নতুন পানিতে জন্ম নেয় রুই, কাতলা, শিং, মাগুর, পুঁটি, ট্যাংরা, কই, বাইম, গুচি সহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ। আর এই মাছ শিকার গ্রামবাংলার এক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি।

সাম্প্রতিক বর্ষা মৌসুমে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় এমন মন মুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে পড়তেই আমন ধানের চাষের জমিতে গর্জন করে ছুটে চলেছে ট্রাক্টর। আর তার পিছু পিছু কাদা-জলে দলবেঁধে ছুটছে একদল শিশু-কিশোর। তাদের হাতে রয়েছে জাল, বাঁশের তৈরি পলো, গোবর ঝুড়ি, প্লাস্টিকের ডালা সহ নানা ধরনের হাতিয়ার। সবার লক্ষ্য একটাই—মাছ শিকার করা।

কাদা-জলে কেউ জাল টানছে, কেউ পলো দিয়ে মাছ ধরছে, আবার কেউ হাঁসফাঁস করে মাছের খোঁজে ব্যস্ত। কারো শরীর কাদায় মাখামাখি, কারো গা জলে ভেজা, তবুও সবার চোখে-মুখে প্রশান্তির হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের শৈশবের এই নিষ্পাপ আনন্দ, তাদের দুরন্তপনার এই দৃশ্য যেন গ্রামবাংলার চিরন্তন এক প্রাণবন্ত চিত্র।

স্থানীয় প্রবীণ কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, "এই বর্ষা আমাদের জীবনের এক সোনালী অতীত। আমরাও ছেলেবেলায় এভাবে মাছ ধরতাম। এটি আমাদের গ্রামবাংলার এক ঐতিহ্য, যা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত, প্রকৃতির এই ভালোবাসা থেকে তারা বঞ্চিত। কালের পরিক্রমায় আমাদের ঐতিহ্যগুলো চোখের সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে।"

বর্ষা শুধু কৃষকের মৌসুম নয়, এটি গ্রামীণ জনপদের এক সমৃদ্ধ জীবনের প্রতিচ্ছবি। চাষের জমিতে মাছ ধরা, হাসিমুখে কাদায় গড়াগড়ি খাওয়া শিশুদের এই দৃশ্য বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকেই মনে করিয়ে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এই দৃশ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উদযাপন করা সময়ের দাবি।