Image description

যাযাবর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেদে সম্প্রদায় অন্যতম। প্রান্তিক এই সম্প্রদায়ের সিংহভাগ নারী-পুরুষই ভাসমান জীবন যাপনে অভ্যস্ত। স্থানীয়ভাবে এরা ‘বাইদ্যা’ নামে পরিচিত। বর্তমানে তাদের একটা বড় অংশ ডাঙায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। কালের বিবর্তনে বেদেদের জীবন বৈচিত্র্যে এসেছে পরিবর্তন।

"মোরা এক ঘাটেতে রান্দি বাড়ি, মোরা আরেক ঘাটে খাই, মোদের সুখের সীমা নাই, পথে ঘাটে ঘুরে মোরা সাপ খেলা দেখাই, মোদের ঘর বাড়ি নাই।" বিখ্যাত সুরকার আবু তাহের “বেদের মেয়ে জোসনা” ছবির গানের মধ্যে বুঝিয়েছেন, যে যাযাবর মানবগোষ্ঠী গুলোকে বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, তারাই হলো বেদে পরিবার।

যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্রময়। বেদেরা জীবনকে এক ঘরে রাখতে চায় না, প্রকৃতিকে ভালবেসে প্রকৃতির মাঝেই এরা জীবনের বৈচিত্র্যের সন্ধান খোঁজে। এরা মূলত আমাদের দেশে বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠী।

তেমনি কিছু বেদে পরিবার রয়েছে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার পালরদী নদীর পাড়ে। এখানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি বেদে পরিবার নদী ছেড়ে জায়গা কিনে ডাঙ্গায় বসতি গড়েছেন। তাদের এ বেদে সমাজে এখন অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। দিন বদলের হাওয়া লেগেছে তাদের গায়েও। এখন তারা শিক্ষিত হচ্ছে, সচেতন হচ্ছে। আগের মতো মানুষ সাপ খেলা দেখে আর অনন্দ পায় না। কুসংস্কার ঘেরা চিকিৎসাও নিতে চায় না কেউ। তাই তারা তাদের পেশাকে পবিরর্তন করে নিয়েছে। এখন তারা সমাজের অন্য মানুষের মতো কাজকর্ম ও ব্যবসা বানিজ্য করে সংসার চালাচ্ছে।

তবে সময়ের প্রভাবে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠীগত হয়েই এরা বাস করে। আগে বেদে নারীরা উপার্জনে মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও এখন পুরুষরাই কাজ কর্ম করছে। তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করা ও সমাজে নিজেদের ঠাঁই তৈরি করতেই মূলত তাদের নদী ছেড়ে ডাঙ্গায় স্থায়ী বসবাস।

বাংলাদেশের সমাজে শ্রেণি বিভাজন না থাকলেও বেদেদের দেখা হয় কিছুটা আলাদা চোখে। আর তাই সমাজের মূলস্রোতে মেশাটাও তাদের জন্য খুব একটা সহজ নয়। সমাজের মানুষ ও সরকার যদি তাদের চাকরীর নিশ্চয়তা সহ জীবন মান উন্নয়নের কথা ভাবতো, তবে বদলে যেতে পারতো তাদের জীবনযাত্রা এমনটাই জানালেন বেদে সর্দার মনির হোসেন।

সমাজের অঙ্গ হিসেবে একটি জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তাদেরকে সমাজে সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য পেশা পরিবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারলে নতুন জীবন পেতে পারে বেদে সম্প্রদায়।