Image description

লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল কমলনগর ও রামগতি উপজেলা, যা সয়াল্যান্ড নামে পরিচিত, সেখানে এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলনের আশা জাগিয়েও, কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রকৃতি। এ বছর ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হলেও, অনাবৃষ্টিতে মাটি শুকিয়ে তীব্র লবণাক্ততা দেখা দেওয়ায় ফসল ঝলসে যাচ্ছে। ফলে, প্রায় ৩৯০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কৃষকরা জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় জমির মাটি শুকিয়ে লবণাক্ত হয়ে গেছে, যা সয়াবিন গাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে, ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা কৃষি বিভাগের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন। স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা গেলে লবণাক্ততার প্রকোপ কিছুটা কমানো সম্ভব। কিন্তু, বর্তমানে পর্যাপ্ত পানির অভাব এই সমস্যার সমাধানকে কঠিন করে তুলেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এর ফলে, জমির উর্বরতা কমে লবণাক্ততা বাড়ছে। সয়াবিন ও বাদামের ছোট ছোট গাছগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। সয়াবিন ক্ষেতের মাঝখানে গাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে।

রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের উত্তর চর আফজল গ্রামের কৃষক মিরাজ মাঝি ও হানিফ মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জমির সয়াবিন গাছ মরে গেছে। রামগতি উপজেলার চর নেয়ামত গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি বলেন, "বৃষ্টি নেই, নোনা মাটির কারণে ২০ শতাংশ জমির সয়াবিনের চারা ঝলসে মাঠের অধিকাংশ খালি দেখাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কেউই চাষাবাদের বিষয়ে পরামর্শ দিতে আসে না। এ ছাড়া একটি বীজও কখনো কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়নি।"

কমলনগর উপজেলার চরপাগলা গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দীন ও বাহার আলী জানান, জমির মাটি ইটের ভাটায় নেওয়ায় জমির উর্বরতা কমে গেছে। তাই এখন আর তেমন ফসল হয়না। সামনে আর চাষাবাদ করবেননা তারা। আবার নোনা মাটির কারণে সয়াবিন গাছ মরে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে জমিতে লবণাক্ততা কিছুটা কমবে। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। এভাবে গাছ মরে গেলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার রামগতিতে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। কমলনগরে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা।

কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা জানান, এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ ইটের ভাটা রয়েছে। কৃষকরা না বুঝে লোভে পড়ে জমির টপসয়েল বিক্রি করার ফলে জমিগুলো লবণাক্ততা সৃষ্টি হয়। যার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। আমরা উপসহকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সব সময় খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।