Image description

কোকিলের গান আর ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি জানান দিচ্ছে শীতের বিদায়। প্রকৃতিতে লেগেছে রঙের খেলা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শিমুল ও পলাশ ফুল ফুটে জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন। কবি-সাহিত্যিকদের মনও এই সময়ে নতুন করে জেগে ওঠে। তারা তাদের লেখনিতে প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর রূপ ফুটিয়ে তোলেন। বসন্তের এই আগমন যেন তাদের মনে এক নতুন সুর নিয়ে আসে, যা তাদের কবিতা ও গানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই সময়ে লেখা কবিতাগুলোতে প্রেম, ভালোবাসা ও প্রকৃতির বন্দনা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে।

উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমুল গাছ। একসময় শিবরামপুর, পলাশবাড়ী, শতগ্রাম, পাল্টাপুর, সুজালপুর, নিজপাড়া, মোহাম্মদপুর, ভোগনগর, সাতোর, মোহনপুর ও মরিচা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। কালের বিবর্তনে এখন তাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।  

অথচ একসময় গ্রামাঞ্চলে শিমুল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত ছিল। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোড়া, আখের গুড় তৈরিতে শিমুলের রস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গাছের মূল ব্যবহার করত। কিন্তু নানা কারণে এখন শিমুল গাছ রোপণ করা হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায় এবং ধীরে ধীরে বিশাল আকার ধারণ করে। কালের বিবর্তনে এই গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

বসন্তে শিমুল গাছে রক্ত কবরী লাল রঙে ফুল ফোটে, যা সবার মন জয় করে নেয়। কিছুদিন পর ফুলগুলো সাদা ধোঁয়াটে হয়ে তুলোর রূপ নেয়। একসময় এই শিমুল গাছ গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। গ্রামের মানুষ শিমুলের তুলা সংগ্রহ করে বিক্রি করত, আবার কেউ কেউ নিজের গাছের তুলা দিয়ে লেপ, তোশক, বালিশ তৈরি করত। শিমুল তুলা বিক্রি করে অনেকের জীবন বদলে গেছে। তবে কালের বিবর্তনে এবং আধুনিকতার প্রভাবে বীরগঞ্জ উপজেলায় আগের মতো শিমুল গাছ দেখা যায় না। গাছগুলো ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার সেন বলেন, বসন্ত মানেই শিমুল ও পলাশ ফুল। এবারের বসন্তে ঘুরে আসতেই বীরগঞ্জ উপজেলায় শিমুল গাছগুলোতে আগুন রাঙা নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। সহৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। 

তিনি আরও বলেন, শিমুল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত ছিল । বর্তমানে শিমুল গাছ বিলুপ্তের পথে।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. মনজুরুল ইসলাম মনজু মনে করেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেন বসন্তের আগমন পূর্ণ হয় না। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গান, কবিতা ও নাটকে বাংলার প্রকৃতির রূপ বারবার ফুটে ওঠে। তেমনই, বসন্তের আগমনে শিমুল ফুলের কথা মনে আসে। এখন গাছে গাছে শিমুল ফুল ফুটে আছে। আমাদের ঋতু বৈচিত্র্যের এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।

মানবকণ্ঠ/এসআর