Image description

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

বুধবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ডাক দেয় সংগঠনটি। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, উপ-কর কমিশনার শাহাদাত জামিল শাওন ও মোস্তফিজুর রহমানসহ পরিষদের সিনিয়র কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে ওই সভার বিস্তারিত লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরে তারা জানান, সভার শুরুতেই অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আমি মিটিং দীর্ঘ করবো না। কর থেকে একজন এবং কাস্টমস থেকে একজন, সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি থেকে যেকোন তিনজন কথা বলতে পারবেন। আমি ৬-৭ মিনিটের বেশি নেব না। কেবিনেট সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে আরেকটি মিটিং আছে। আমি তাদের বসিয়ে রাখতে পারব না এবং সময় গণনার জন্য কে থাকবেন সেটিও জিজ্ঞাসা করেন। 

এরপর ঐক্য পরিষদের মোট ১৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দুই জন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান এনবিআরকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক। এনবিআরকে অক্ষুণ্ন রেখে আরও শক্তিশালী, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।

তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংক যেমন সিপিডি, টিআইবি প্রমুখ ইতোমধ্যে প্রকাশ্য বিবৃতিতে সংস্কার প্রক্রিয়ার কাঠামো ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ জানায়, গতকালের সভায় রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি। তারা রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা দুটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্ধারিত হওয়া উচিত-এই বিষয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন।

পরামর্শক কমিটির বক্তব্য শেষে উপস্থিত দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বক্তব্য রাখেন। কিন্তু তারা অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনটি সঠিক, কোনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য কিংবা কোনটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে সেই বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। 

এসব তথ্য তুলে ধরে ঐক্য পরিষদ বলেছে, জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিবাদ উত্তর যুগে এ সভায় সরকারের নীতিনির্ধারকগণের বক্তব্য ও সভা শেষে মিডিয়ায় দেওয়া বক্তব্য আমাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। আমরা কিছু কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ সভাটি ‘ফলপ্রসূ’ ছিল বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

এনবিআর চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে পরিষদের নেতারা বলেন, শুরু থেকেই দেখা গেছে, আমাদের এই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির ব্যাপকতা ও যৌক্তিকতার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকগণকে সঠিক তথ্য প্রদান না করে বরং প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আজকের অবস্থানে উপনীত করেছে।

ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, আজ বুধবার দুপুরের পর থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এদিন এনবিআরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।

আগামী শনি ও রোববার কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশন ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। আগামী সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।