
গেল কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরবরাহ কম ভোজ্যতেলের। পণ্যটির দাম নিয়ে আমদানিকারক ও সরকারের দীর্ঘ দর কষাকষির পর লিটার প্রতি এক লাফে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে দাম। এরপরও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি পণ্যটির সরবরাহ। এখনও কিছুটা সংকট রয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিনের। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।
দাম বৃদ্ধির পরপর ব্যবসায়ীরা সরবরাহ বৃদ্ধির আশা করলেও তিনদিনেও ভোজ্য তেলের নতুন সরবরাহ পাননি তারা। তবে পুরোনো তেল নতুন দামে (বর্ধিত) বিক্রি করতে দেখা গেছে বাজারে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯০, দুই লিটার ৩৭৫ এবং ৫ লিটার ৯২১ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
নগরীর অক্সিজেন এলাকার হাজী সিরাজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী সাহাব উদ্দিন বলেন, দাম বৃদ্ধির পর তিনদিন হয়ে গেলেও এখনও নতুন সরবরাহ পাইনি। পুরোনো তেল যা ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন এক লিটারের বোতলজাত কোনো তেল আমাদের কাছে নেই। তবে মঙ্গলবার মেঘনা গ্রুপের একজন বিক্রয় কর্মী কিছু অর্ডার নিয়েছিল। কিন্তু এখনও সরবরাহ দেয়নি। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এসআর আসেনি এখনও। এমনকি ফোনও রিসিভ করেনি।
অনেকটা একই কথা বললেন নগরীর দুই নম্বর গেট কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, এখনও কোনো এসআর অর্ডার নিতে আসেনি। নতুন তেল এখনও সরবরাহ দেয়নি। তবে আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে আসবে। কারণ এখন যেহেতু দাম বেড়েছে, আমদানিকারকরা আর আটকে রাখবে না।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো.আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমদানি নির্ভর হওয়ায় সয়াবিন তেলের দামটা সম্পূর্ণ মিলের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে এখন চারটা মিল আছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বাজার নিয়ে এ বিষয়ে জানতে পারবেন টিকে গ্রুপ থেকে। বাজারে আসলে তেলের দাম নিয়ে কারসাজির কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীর পরিমাণ বাড়লে বাজার ব্যবস্থা আরও ভালো হতো। সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ইলিয়াস ব্রাদার্স, দাদা গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর নতুন করে রিফাইনারি মিল করাটা সময় সাপেক্ষ।’
দাম নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে পৃথিবীতে কোথাও কোনো খোলা তেল বিক্রি হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে উৎসাহিত করা হয়। বিষয়টি অস্বাস্থ্যকর হলেও তা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। খোলা তেল বন্ধ করে দিয়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনসহ বোতলজাত ও পলিপ্যাক তেল বিক্রি করতে পারে। এতে দাম ও মেয়াদ উল্লেখ থাকায় কোনো ব্যবসায়ী চাইলেও মজুদ করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে পারবে না।’
তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশীয় মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর, কাস্টম ও ভ্যাট বিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকার ডিউটি শতভাগ প্রত্যাহার করেছিল রমজানের বাজার ঠিক রাখার জন্য। ৩১ মার্চের পর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাস্টমসের সফটওয়ারে ডিউটি আগের নিয়মে চালু হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম নিম্নমুখী। তাই ডিউটি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে পরিমাণ দাম বাড়ার কথা, সেটা বাড়েনি।’
দাম আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবার (১৬ এপ্রিল) সরকার আবার এআইটি (এডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স) ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করেছে। তাই বাজার পড়তির দিকে। সরবরাহও ঠিক আছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মজুদও বেশি আছে। আশা করছি, ঈদুল আজহা পর্যন্ত সয়াবিন তেলের কোনো সংকট হবে না।’
Comments