Image description

বাংলাদেশে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম শামীন মাহফুজ। সোমবার (১৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে ২ জুলাই সাভার থেকে ফয়সাল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশের জঙ্গিবাদবিরোধী বিশেষায়িত ইউনিট—অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। ইউনিটটি জানিয়েছে, ফয়সাল দীর্ঘদিন ধরে টিটিপির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের পক্ষে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফয়সাল ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানের তুরখাম সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ নামের আরও একজন বাংলাদেশি। পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে জুবায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন।

এটিইউ-এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় র‍্যাব শামীন মাহফুজকে গ্রেফতার করে এটিইউ-এর কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এটিইউ কর্তৃক সাভার মডেল থানায় দায়ের করা এক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইউনিটটি জানতে পারে—টিটিপির মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়েকজন যুবক পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে গিয়ে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক শাসন কায়েমের চেষ্টা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত ২ জুলাই সাভারের দরিয়ারপুর এলাকায় মমতাজ ম্যানশনের ‘ভাই ব্রাদার্স টেলিকম’ নামের একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল জানায়, টিটিপির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে ও আহমেদ জুবায়ের গত বছরের ১৮ অক্টোবর ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যায়। পরে তারা ২৯ অক্টোবর পাকিস্তানে পাড়ি জমায় এবং ৬ নভেম্বর তুরখাম সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। এরপর ফয়সাল পাকিস্তানের করাচি হয়ে দুবাই ঘুরে ১৬ নভেম্বর দেশে ফিরে আসে। তবে তার সঙ্গী জুবায়ের পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।

ফয়সালকে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পরে গত ৫ জুলাই তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফয়সালের দাবি অনুযায়ী—একজন আল ইমরান ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দারের মাধ্যমে সে টিটিপির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। ইমরান বর্তমানে বাংলাদেশে টিটিপির পক্ষে কাজ করছেন। তার সঙ্গে ফয়সালের নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ হতো। তারা বাংলাদেশে টিটিপির সদস্য সংগ্রহ, তথাকথিত খেলাফতের দাওয়াত ছড়ানো ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম চালাচ্ছিল।

ফয়সালের জবানবন্দিতে আরও উঠে এসেছে, তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল রেজাউল করিম আবরার, আসিফ আদনান, জাকারিয়া মাসুদ ও সানাফ হাসানের সঙ্গে—যারা সবাই কথিত ‘জিহাদের’ প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, টিটিপি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার একটি সহযোগী সংগঠন। ২০০৭ সালে বায়তুল্লাহ মেহসুদের নেতৃত্বে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে এবং ২০১১ সালে জাতিসংঘ এটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। সংগঠনটি মূলত পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে সক্রিয় এবং আফগানিস্তানে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানে ইসলামি শরিয়া কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে এটিইউ-এর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সদ্য গ্রেফতার হওয়া শামীন মাহফুজ অতীতেও জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাকে একবার রাজধানীর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) গ্রেফতার করেছিল। সে পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন বিদ্রোহীদের সহায়তায় ‘আল শ্বারকীয়া’ নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলে এবং সদস্যদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিতো। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জামিনে মুক্ত হয় শামীন মাহফুজ।