Image description

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আফতাব উদ্দিন ও তার পুত্রবধূ রিভা আকতারকে হত্যা এবং ছয় লাখ টাকা ও গহনা লুটের ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন দুপচাঁচিয়ার বেরুঞ্জ গ্রামের আব্দুল হাকিম (৩৪), লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামের আব্দুল মান্নান (৫০) এবং আদমদিঘির বাসিকোড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪১)। পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতদলের সর্দার হিসেবে পরিচিত হাকিমের বিরুদ্ধে কমপক্ষে সাতটি মামলা রয়েছে।

পুলিশের দাবি, আফতাব উদ্দিনের পুরোনো কর্মচারী আব্দুল মান্নান এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি আগে আফতাবের সেচ পাম্পে কাজ করতেন। অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে বাদ দেওয়া হলে আব্দুল মান্নানের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই তিনি হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির পরিকল্পনা করেন।

জানা গেছে, গত ৮ জুলাই দিনগত রাতের কোনো একসময় লক্ষ্মীমণ্ডপ পূর্বপাড়া গ্রামের বসতবাড়িতে প্রবেশ করে ডাকাতরা। এরপর প্রথমে বৃদ্ধ শিক্ষক লক্ষ্মীমণ্ডপ পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত পানাউল্লাহ পঁচার ছেলে আফতাব উদ্দিনকে (৬৫) ঘর থেকে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে প্রবেশ করে একই কায়দায় তার ছেলের বউ সৌদি প্রবাসী ছেলে শাহজাহান আলীর স্ত্রী রিভা আকতারকেও (২৮) খুন করা হয়। এ সময় ঘরে থাকা শিশু রুকাইয়া তাসনিম মালিহা (৫) অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। ডাকাত পরিচয়ধারীরা শিশুটিকে চোখ বন্ধ করে রাখার হুমকি দেয়। এরপর ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, দুটি মোবাইল ও নগদ ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায় তারা।

পরদিন ৯ জুলাই সকালে হাত-পা ও মুখ বাঁধা শ্বাসরোধ অবস্থায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে হাকিম ও মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার চর জামাল গ্রামে অভিযান চালিয়ে রফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে স্বর্ণের দুল, চুড়ি, আংটি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ঘড়ি ও নগদ ৭ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পদক্ষেপ নেবেন। জড়িত অন্য পলাতকদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান অতিরিক্ত এই পুলিশ সুপার।