
মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের সন্তানদের যেমন আলমারি ভরা বাহারি রঙ ও ডিজাইনের কাপড় থাকে। ঠিক উল্টো অনেক বাবা-মায়ের সন্তানের শরীর ঢাকার জন্য এক টুকরো কাপড়ও জোটেনা। এই পৃথীবিতে অনেক মা আছেন; যারা অর্থের অভাবে সন্তানের জন্মের পর একটি জামাও কিনে দিতে পারেননা। তাদেরই একজন মোসা. সীমা বেগম।
অন্য মানুষের দানের টাকায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দেড় মাসে আগে তিনি একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তার সংসারে এতোটাই অভাব অনটন যে জন্মে দেড় মাসেও কন্যা সন্তান জামিলাকে একটি জামা কিতে দিতে পারেননি স্বামী। কোনো এক প্রতিবেশী একটি পুরাতন কাপড় দিয়েছিলেন। যেটি এক দিন পরালে অন্যদিন খালি গায়ে রাখতে হয় তার শিশু সন্তানকে।
শুধু কি কাপড় জোটেনি। সীমা বেগমের দেড় মাসের কন্যা সন্তানটি এলার্জি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। টাকার অভাবে এখন পর্যন্ত করাতে পারেননি চিকিৎসা। অসুস্থ্য শিশুটির শারীরিক যন্ত্রণায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাশ।
সীমা বেগম বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা পটুয়াখালীর দশমিনার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নিজাম দর্জির স্ত্রী। নিজাম দর্জি পেশায় একজন দিনমজুর। তার পরিবারে মোট ৪ জন কন্যা সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে ধারদেনা করে কোনো রকমে বড় মেয়ে সাইনার বিয়ে দিয়েছেন। সীমা বেগমের স্বামী নিজাম দর্জির আয়ে সংসারের চাকা ঘোরেনা। একবেলা খেলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। থাকতে হচ্ছে খরকুটোর একটি ঝুপড়ি ঘরে। বর্ষায় সাপ-বিচ্ছুর আতঙ্কে দিন-রাত কাটে প্রাণ ভয়ে।
ডান চোখ অন্ধ মোসা. সীমা বেগম বলেন, অনেক সময় তিনটি কন্যা সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। দেড় মাসের শিশু সন্তানের অসুস্থ্যতার অসনীয় কষ্ট তার সহ্য হয়না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যদি তাকে ও তার পরিবারকে একটি থাকার ঘর করে দেন এবং আর্থিকভাবে একটু সহায়তা করেন; তাহলে তিনি সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকতে পারতেন।
এ বিষয় দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরতিজা হাসান বলেন, সীমা বেগমের পরিবার আবেদন করলে আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হবে। এই মুহুর্তে কোনো ঘরের প্রকল্প না থাকায় তাকে ঘর দেয়া যাচ্ছেনা। তবে, তিনি ঘরের আবেদন করে রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প এলে সীমা বেগমের পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।
Comments