
খুলনার শিরোমনিস্থ বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডে বিগত আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট এখনও বহাল আছে। সরকার পরিবর্তনের পর নতুন এমডি এবং কর্তৃপক্ষ বসলেও নিয়োগ-পদোন্নতি থেকে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরনো দলীয় ক্যাডার এবং স্বজনপাত্ররা। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তান, গণভবনের তদবির এবং ঘুষের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি নথি গায়েবের আশঙ্কাও উঠেছে। বর্তমান প্রশাসন এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবার পরিবর্তে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বলে কর্মীরা দাবি করছেন।
সিন্ডিকেটের মূল চরিত্র
ক্যাবল শিল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বিগত আওয়ামী সরকার আমলে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের প্রধান ছায়া এমডি এম এম মফিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে রয়েছেন অফিস সুপার সরদার আহসান হাবিব (রাজু), সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপক বেগ মুকিত হোসেন, নন-টেকনিক্যাল ম্যানেজার তানভীর খান, সিকিউরিটি ম্যানেজার মামুন এবং ভিজিএ প্রোডাকশনের খান অরিদ মোহাম্মাদ শুভ প্রমুখ।
বেগ মুকিত হোসেনের অবৈধ নিয়োগ
বেগ মুকিত হোসেন, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও খানজাহান আলী থানার সভাপতি কুখ্যাত ভূমিদস্যু বেগ লিয়াকত আলীর ছেলে। তিনি বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১৩ সালে সাজানো ভাইভা দিয়ে কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। এক বছর পাঁচ মাস পর স্পেশাল প্রমোশন পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক হন, যা নিয়ম অনুসারে ৫ বছর পর সম্ভব। দুদক অভিযানে অসহযোগিতা সত্ত্বেও বহাল রয়েছেন। বর্তমানে আমেরিকায় ২ মাসের ছুটি নিয়ে আছেন এবং ছুটি বাড়ানোর চেষ্টায়। তাকে সাহায্য করছেন আজাদ হোসেন এবং আহসান হাবিব।
সরদার আহসান হাবিবের গণভবনের ছায়া
অফিস সুপার সরদার আহসান হাবিব (রাজু) এসেনশিয়াল ড্রাগের সাবেক কর্মচারী। ২০১৩ সালে গণভবনের রেফারেন্সে যোগদান করেন। তার শ্বশুর মোহাম্মদ আলী (বিষু) শেখ রেহানার বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। যোগদানের পর ৫-৬ মাস দ্বৈত বেতন নেন। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে স্পেশাল প্রমোশন পান। অফিসে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা চালান, যা সতর্কতা সত্ত্বেও চলছে। ৫ আগস্টের পর চকলেট বিতরণ করে লাঞ্ছিত হন। বেগ মুকিতকে তথ্য পাচার করে সাহায্য করছেন।
যোগাযোগ করলে আহসান হাবিব বলেন, "শ্বশুরের শেখ রেহানার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগগুলো সমাজের কীটদের। ৬ বছর পর একটি প্রমোশনে বেতন বেড়েছে ১০ টাকা। সত্যতা নেই।"
মোঃ আজাদ হোসেনের দুর্নীতির হাতিয়ার
সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ আজাদ হোসেন কট্টোর আওয়ামী লীগের কর্মী। এইচএসসি পাস করেও টাইপিস্ট থেকে ৩ বার স্পেশাল প্রমোশন পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক হন। আওয়ামী ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রমোশন নেন। দুদক অভিযানে অসহযোগিতা করেন এবং অভিযুক্তদের রক্ষা করেন। নথি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ২০১৩ সালের নিয়োগের নথি। ৫ আগস্টের পরও হাসিনার সমর্থনে কথা বলেন।
যোগাযোগ করলে আজাদ হোসেন বলেন, "নথি গায়েবের কথা প্রথম শুনলাম। দুদককে সব তথ্য দিয়েছি। অভিযোগগুলো সঠিক নয়।"
বর্তমান প্রশাসনের নীরবতা
কর্মীরা জানান, ৫ আগস্টের পরও সিন্ডিকেট বহাল। নতুন এমডি মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, "আমি ভালো কাজ করতে এসেছি। সমস্যা হলে চলে যাবো।" কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কর্মীরা দাবি করছেন, তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
Comments