নদীর স্রোতে ভাসছে শিক্ষার স্বপ্ন, সেতুর অভাবে ঝুঁকিতে নওগাঁর শিক্ষার্থীরা

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভায় শিব নদীর তীরে ১২০ বছরের পুরোনো নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু নদীর ওপর সেতুর অভাবে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী ডিঙি নৌকায় চড়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। বিকল্প পথ ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং কাঁদাময়, যা বর্ষায় আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। ফলে, নদীর স্রোতের মধ্য দিয়ে শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে শিশুরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে, একসময় ৩০০ শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে এখন মাত্র ১৫০ জন পড়াশোনা করে। নওগাঁ, মালিদহ ও গোপইল গ্রামের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা নদী পারাপারের ভোগান্তিতে নিত্যদিন কষ্ট পাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আহমেদ বলেন, “নদী পথ এই স্কুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা। মালিদহ ও গোপইল গ্রামের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী নদী পার হয়ে আসে। ডিঙি নৌকায় চড়ে তারা ভয় পায়। একটি সেতু হলে এ সমস্যার সমাধান হতো। আমি সরকারের কাছে সেতু নির্মাণের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।”
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, “বৃষ্টিতে নদীতে নামতে গিয়ে পড়ে যাই, নৌকা থেকে ছিটকে যাই। বই-খাতা ভিজে যায়, শরীর ব্যথায় ভরে।” আরেক শিক্ষার্থী আলিশা বলেন, “নদী ভরা থাকলে স্রোতে ভয় লাগে। ছোট ভাই-বোনরা সাঁতার জানে না, চিৎকারও করতে পারে না। আমরা এখানে একটা সেতু চাই।”
অভিভাবক শহিদুল ইসলাম বলেন, “নদী পার করে বাচ্চাদের নিয়ে আসি। সেতু থাকলে তারা নিজেরাই যেতে পারত। ঘুরপথের রাস্তা খুবই খারাপ।” আরেক অভিভাবক সামসুল হক বলেন, “সরকার পাঁচ বছর বয়স থেকে ভর্তির নিয়ম করেছে। নদী ভরা থাকলে এই ছোটরা কীভাবে পার হবে? অন্যান্য জায়গায় ব্রিজ হয়, আমাদের এখানেও নজর দেওয়া দরকার।”
স্থানীয় বাসিন্দা জেকের আলী ও আবুল হোসেন জানান, “নদীর ওপারের গ্রামের শিক্ষার্থীরা বেশি। বর্ষায় ঘুরপথে চলাচল অসম্ভব। তাই নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা সেতুর দাবি জানাই।”
মোহনপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, “কেশরহাট থেকে খালগ্রামের রাস্তা সংলগ্ন নদীতে সেতুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।” তবে রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নদীর ওপর একটি সেতু না হলে এই অঞ্চলের শিক্ষার স্বপ্ন ভাসতে থাকবে স্রোতের মুখে। স্থানীয়রা দ্রুত সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এই ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াতের সমাধান চান।
Comments