
শরীয়তপুরের জাজিরায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দেওয়া সেই বিতর্কিত ঘটনায় অবশেষে পদক্ষেপ নিলো পুলিশ প্রশাসন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পারভেজ আহমেদ সেলিমকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভেতরে মাসিক ভোজসভা আয়োজন করেন ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম। তার এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে যখন ভোজের টেবিলে অতিথি হয়ে বসানো হয় নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগের নাওডোবা ইউনিয়ন সভাপতি মোক্তার বেপারীকে।
ওসি-র এমন পদক্ষেপের খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রশ্ন ওঠে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা নিয়ে। পুলিশ প্রশাসনের ভোজসভায় কীভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের এক শীর্ষ নেতাকে বিশেষ অতিথি করে বসানো হলো, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এবং সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
বিতর্কের মাত্রা বাড়তেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে নাওডোবার কালু বেপারী কান্দি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোক্তার বেপারীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি ছিলো ওসির পরিকল্পিত ‘নাটক’। সমালোচনার মুখ থেকে নিজেকে বাঁচাতে এবং দায় এড়াতে তিনি রাতারাতি গ্রেপ্তারের নাটক সাজান।
যদিও ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম দাবি করেছিলেন, মোক্তার বেপারী বাজার কমিটির সভাপতি হিসেবে ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার এই ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। বরং ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “শনিবার সকালে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ সেলিমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ—যে থানার ওসি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন, তিনি নিজেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভোজসভায় বসিয়েছেন। এতে পুলিশের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।
ভোজসভায় এক বিতর্কিত নেতার উপস্থিতি থেকে শুরু হয়ে রাতারাতি গ্রেপ্তার, এবং অবশেষে ওসির প্রত্যাহার—সবকিছু মিলিয়ে শরীয়তপুরে এ ঘটনাটি এখন আলোচনার শীর্ষে। পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
Comments