Image description

শিল্পনগরী গাজীপুরে সন্ধ্যা নামলেই রাস্তাঘাটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) আওতাধীন এলাকায় অপরাধের হার বেড়ে চলেছে।

স্থানীয়রা জানান, শহরের ১৯টি এলাকায় ছিনতাই ও অপরাধের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে টঙ্গীর সান্দারপাড়া, মিলগেট, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও ভোগড়া বাইপাস উল্লেখযোগ্য।

গত ১৬ আগস্ট রাতে বড়বাড়ি থেকে বোর্ডবাজার যাওয়ার পথে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি আশিক চৌধুরীর কাছ থেকে অটোরিকশায় যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা দেড় লাখ টাকা ও দুটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। এর আগে ৭ আগস্ট গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ছিনতাইকারীদের ধাওয়ার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১১ জুলাই টঙ্গীতে কলেজশিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকেও ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গত ছয় মাসে গাজীপুরে ছিনতাই ও দস্যুতার ৩৪টি মামলা হয়েছে, যা আগের ছয় মাসে ছিল ২৬টি। ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়ে ১৮৩টি হয়েছে, যা আগের ছয় মাসে ছিল ১৩৮টি। চাঁদাবাজির ঘটনাও বেড়েছে, যেখানে ফুটপাত, পরিবহন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে এসব অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খান জানান, ছিনতাই ঠেকাতে রাতে টহল জোরদার ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের তৎপরতা ও তল্লাশির ঘাটতি রয়েছে।

বেকারত্বকে অপরাধ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে কমিশনার জানান, সম্প্রতি ৭২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় প্রায় দুই লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন, যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।