Image description

দৈনিক মানবকণ্ঠ অনলাইনে প্রতিবেদনের পর ধলেশ্বরী নদীতে অপরিকল্পিত ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ১৩ আগস্ট মানবকণ্ঠ অনলাইনে “অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে ধলেশ্বরী নদীতে ভয়াবহ ভাঙন, ঝুঁকিতে শিল্পকারখানা ও বসতবাড়ি” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জেরে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সামনে কৃত্রিমভাবে ভরাটকৃত মাটি-বালি অপসারণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের জরিপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে।

শাহ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে তাদের প্রায় দুই একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএর টেন্ডারে ৪১ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ ঘনফুট মাটি-বালি উত্তোলনের জন্য এক কোটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে ১০টি ড্রেজার ব্যবহারের কথা থাকলেও বাস্তবে ২০ থেকে ২৫টি ড্রেজার দিয়ে রাতভর বালি তোলা হচ্ছিল, যা নদীভাঙনের প্রধান কারণ।

শাহ সিমেন্টের পাবলিক রিলেশন অফিসার সাজ্জাদ বলেন, “অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে আমাদের দুই একর জমি নদীতে চলে গেছে। বিআইডব্লিউটিএর এভাবে বালু বিক্রির এখতিয়ার নেই। এটি জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার।” তিনি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কারও জমি জোর করে দখল করিনি। জমি বিক্রির পর কিছু ব্যক্তি ওয়ারিশ দাবি করছেন, যা জটিলতা সৃষ্টি করেছে।”

অন্যদিকে, টেন্ডার গ্রহীতা শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শাহ সিমেন্ট নদী ভরাট করে জমি দখল করেছে, যা নদীর নাব্যতা কমাচ্ছে। তিনি বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ টেন্ডারের মাধ্যমে নদী খনন করছে, যা নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজন। শাহ সিমেন্ট আমাকে বাধা দিচ্ছে এবং মারধর করেছে। আমি জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের জন্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে অনুরোধ করেছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা মো. কিরণ ও জিয়া জানান, এলাকায় কোনো বসতবাড়ি ভাঙনের ঘটনা ঘটেনি। তবে শাহ সিমেন্টের বাউন্ডারির ভেতরে জমি ভাঙনের বিষয়টি তারা নিশ্চিত করতে পারেননি, কারণ তাদের প্রবেশাধিকার নেই। তারা শাহ সিমেন্টের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন।

শাহ সিমেন্টের ম্যানেজার আশরাফুল হক বলেন, “ড্রেজিংয়ের সময় সরকারি নিয়ম মেনে চলা জরুরি। তা না হলে পরিবেশ ও তীরবর্তী কারখানাগুলো ঝুঁকির মুখে পড়বে।”

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, “আপাতত ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে। জরিপ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পোর্ট আইন অনুযায়ী আমাদের এই টেন্ডার দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। এর ফলে সরকারের পাঁচ-ছয় কোটি টাকা খরচ বেঁচেছে এবং এক কোটি ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।”