Image description

ভারী বৃষ্টিপাত ও ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে গত জুলাই মাস থেকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। 

বন্যা পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে চিলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের মোট ১৯টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে আরও প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের আবাদি জমিও তলিয়ে গেছে। 

পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে ১২.৯০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা ১৩.৮০ মিটার হওয়ায় বর্তমানে পানি বিপৎসীমার চেয়ে ০.৯০ মিটার নিচে রয়েছে। 

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৩০ হেক্টর আবাদি জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে। এতে সবজি, ভুট্টা, ধান, কলা ও মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। 

চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রতিদিন নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত মঙ্গলবার আমার বাড়িতে পানি ছিল না, আজ পানি ঢুকে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, সবাই পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নিম্নাঞ্চলের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৬ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত।’ 

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান হারে পানি বাড়তে থাকলে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে। 

অপরদিকে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, নদীর ওপারের ১৬টি গ্রামে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, যার অধিকাংশই এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। 

এ বিষয়ে দৌলতপুর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, ইতোমধ্যে চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বাঁকীগুলো সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। 

অপরদিকে বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. রাশিদুর রহমান বলেন, আমাদের ডেঞ্জার লেবেল থেকে ৯০ সেন্টিমিটার নিচে পানি এখন পর্যন্ত আছে। তবে দৌলতপুরের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে চর এলাকা। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমাদের ডেঞ্জার লেবেল ১০ কিলোমিটারে কি পরিমান ক্ষতি হয়, তা আমরা ম্যাজারমেন্ট করছি।