Image description

রূপগঞ্জের ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা অধ্যক্ষ, পিকআপ চালক হেদায়েত উল্লাহ ও বই ক্রেতাকে হাতেনাতে আটক করলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা অর্থের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে একটি নীল রঙের পিকআপ ট্রাক স্কুলে প্রবেশ করে। অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীন স্টোর রুম থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির নতুন বই কেজি দরে বিক্রি করেন। পিকআপ চালক ও বই ক্রেতা মিলে বইগুলো গাড়িতে তুলে ফেলে। বিকেলে স্থানীয়রা এ ঘটনা টের পেয়ে তাদের আটক করে শিক্ষা অফিসারকে জানায়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম বই পিকআপ থেকে নামিয়ে স্টোর রুমে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোটা অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষ ও অন্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর সুরাইয়া পারভীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়ে স্কুলকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ২৫ হাজার টাকার কাজের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল তোলা, গোপনে আয়-ব্যয়ের লেনদেন, এবং প্রতিবাদকারী শিক্ষক বিমল দাসকে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, “বইয়ের অভাবে আমাদের বই দেওয়া হয়নি, অথচ বই কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করব।”

অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম বলেন, “নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় ১ লাখ টাকার বই জব্দ করা হয়েছে। অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ম্যানেজের অভিযোগ মিথ্যা।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, “ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, শিক্ষা অফিসের কেউ জড়িত থাকলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”