শরীয়তপুরে বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত শিক্ষার্থী ছামীম

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হওয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ছামীমকে (১৩) শরীয়তপুরে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
সে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর উপজেলার ডিএম খালি মাঝিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা, মৃত কালিমউদ্দিন মাঝির ছোট ছেলে এবং রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে। বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে ছুটি হবার ঠিক আগমুহূর্তে হঠাৎই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় আহত হয় একাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। গুরুতর আহতদের মধ্যে ছামীমকেও দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
পরদিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ডিএম খালি চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সহপাঠী, প্রতিবেশী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে ছামীমকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছামীমের বাবা কালিমউদ্দিন মাঝি সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মা জুলেখা বেগম ও ছেলে ছামীম কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। ঢাকার দিয়াবাড়ি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে তারা বসবাস করতেন।
নিহত ছামীমের মা জুলেখা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্কুল থেকে ফোন দিয়ে জানাল দুর্ঘটনার কথা। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলের মুখটাই আর চেনা যাচ্ছে না। বারবার বলছিল, ‘আম্মু পানি খাওয়াও’। আমি কিছুই করতে পারিনি। ছামীম বাঁচতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি বাঁচাতে পারিনি।”
ছামীমের মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, “ছামীম ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছেলে, খুবই শান্ত আর মেধাবী। এক বছরের ব্যবধানে ভাই আর ভাগ্নেকে হারালাম। প্রশ্ন থাকে, এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ? পুরনো বিমান দিয়ে কেন এখনো প্রশিক্ষণ চলতে পারে?”
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাহেরুল হক জানান, “এই ঘটনায় একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ চিরতরে হারিয়ে গেছে। পুরো এলাকা শোকাহত। আমরা ছামীমের পরিবারের পাশে আছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঘটনাটির পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশু ছামীমের মৃত্যুতে হারিয়ে গেছে একটি স্বপ্ন, একটি ভবিষ্যৎ। প্রশ্ন রয়ে যায়, কত আর এমন মায়ের বুক খালি হবে অনিরাপদ আকাশপথের দায়ে?
Comments