
ক্যানসারে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চন্দ্রভানু দাসীর। তার স্বামী বর্তমানে ভারতের একটি কারাগারে বন্দি আছেন, যা চন্দ্রভানুর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চন্দ্রভানু একাকী এবং দিশেহারা অবস্থায় দিন পার করছেন। অভাব ও অর্থনৈতিক সংকটে ভীষণ বিপাকে পড়েছেন চন্দ্রভানু।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া গ্রামের চন্দ্রভানুর স্বামী দেলোয়ার হোসেন (৩০) পেশায় দিনমজুর ছিলেন। দুই কন্যাসন্তান নিয়ে একটি টিনের ঘরে চন্দ্রভানুর ছোট সংসার। সহায়-সম্পদ বলতে পাঁচ শতক জমিতে বসতঘর ছাড়া আর কিছু নেই। দিনমজুরির টাকায় কোনোরকমে চলে যেত সংসার। ২০২২ সালে ক্যানসার শনাক্ত হয় দেলোয়ারের। শুরু হয় পরিবারের দুঃসময়। প্রথম দিকে ঋণ করে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। চিকিৎসকেরা দেলোয়ারকে ভারতে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। একদিকে রোগের যন্ত্রণা, অন্যদিকে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারার কষ্টে ভেঙে পড়েন দেলোয়ার।
পরিবারের অভাব দূর করতে ও ভালো চিকিৎসার আশায় ২০২৪ সালে এক দালালের সহায়তায় অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যান দেলোয়ার হোসেন। সেখানে কোনো কারখানায় কাজ করে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি কারখানায় কাজও শুরু করেছিলেন। কাজ শুরুর কয়েক মাস না যেতেই সেখানকার পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস ধরে দেলোয়ার মেঘালয়ের একটি কারাগারে বন্দী আছেন।
এখন দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন চন্দ্রভানু। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে। কিন্তু যেদিন কাজ পান না, সেদিন অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়।
নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান বলেন, ‘পরিবারটির কথা জেনেছি। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে অবগত করা হবে।’
অভাবের তাড়নায় চন্দ্রভানু স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পাশে গুচ্ছগ্রামে বাবার একটি টিনশেড ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে একটি সবজির বাগানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। দিনে ৩০০ টাকা করে পান। সেই টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে কোনোমতো সংসার চালান।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, পরিবারটির অবস্থা খুবই করুণ। দিনে দুইবেলা ভাত জোটে না। অথচ বিগত কয়েক বছরে কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। পরিবারটিকে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজসেবী সংগঠনগুলোর কাছে তাঁরা অনুরোধ জানান।
ভারতের কারাগারে থাকা দেলোয়ার হোসেনের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
চন্দ্রভানু বলেন, ‘এক দিন কাম না করলে সেদিন ভাত জোটে না। ছোট দুই মেয়েরে খাইবার দিতে না পরলে নিজেরই খারাপ লাগে। বাধ্য অইয়া প্রতিদিন কামে যাওয়ন লাগে। স্বামীরে পুলিশে ধরার পর কথা হইছিল। তার শরীলের অবস্থা ভালো না। অসুস্থ স্বামীরে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার লাইগা সরকারের কাছে আমি অনুরোধ জানাই। মেয়েরা তাগর বাবা কবে আইবো জানবার চায়। আমি তহন চুপ কইরা থাহি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বিষয়টি কেউ তাঁকে জানায়নি। পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments