
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবে দুই বোনের অকাল মৃত্যুতে পরিবারটিতে এখন চলছে কেবলই আর্তনাদ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও নীপা আক্তার দম্পতি তাঁদের সন্তানদের হারিয়ে বিলাপ করছেন। মা নীপা আক্তার মাঝে মাঝেই মূর্ছা যাচ্ছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় নিহতের বাবা আবদুর রহমান জানান, ‘দুপুরে গ্রামের কবরস্থানে বড় মেয়েকে দাফন করলাম আর ছোট মেয়েকে দাফন করলাম বিকেলে। এমন দুর্ভাগ্য যেন আর কারও না হয়, এই দোয়া করি।’ এদিকে, দুই মেয়ে হারানোর শোকে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন তিনি, তার চেয়েও বেশি যেন তাকে পোড়াচ্ছে অনুশোচনায়।
আব্দুর রহমান আরও জানান, দু’টি মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে সংসার ভরিয়ে রাখতো। আশা ছিল- পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। আমরা সমাজে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবো। তা আর হলো না। আমাদের একেবারে শূন্য করে চলে গেল। এই শূন্যতা কী ভাবে ভুলবো?
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন আবদুর রহমান। একটি নৌকায় তারা মাঝনদীতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের টানে উল্টে যায় সেটি। আশপাশের কয়েকটি নৌকা তাকে ও তার স্ত্রী নীপা আক্তারকে (৪০) উদ্ধার করে। সাঁতার না জানা দুই মেয়ে কাশ্মীরা রহমান নীলা (১৭) ও ফারিয়া রহমান নীহা (৯) মুহূর্তেই তলিয়ে যায়।
ওই দিন বিকেলেই কলেজপড়ুয়া বড়বোন নিলার (১৭) মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। আর ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নীহাকে (৯) খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরের দিকে নীহার মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, মা-বাবা তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় নৌভ্রমণে বের হলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহমান সাঁতরে রক্ষা পেলেও মা নীপা ও বড় মেয়ে নীলাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নীপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার সময় মরদেহ ভেসে উঠলে ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে।
চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জানান, আব্দুর রহমান পাশের পুলেরঘাট বাজারে ভাঙারি ব্যবসা করেন। নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোক বিরাজ করছে।
এর আগে গত ১ জুলাই সকালে নৌকায় মাদরসায় যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার চরফরাদি ইউনিয়নের চরআলগি গ্রামের তিন শিক্ষার্থী জুবায়ের (৭), শাপলা (১৪) ও শাপলার ভাতিজা আবির (৬) ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে মারা যায়। শুক্রবারও একই নদীতে ঘটলো আরেকটি দুর্ঘটনা।
এ ঘটনার পর ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে এক ভিডিও বার্তায় ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ চরটেকি এলাকার বেড়িবাঁধে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ভ্রমণের অনুমতি দেবেন না বলে জানান তিনি।
Comments