
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শসা চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার(১০ জুন) ভোরে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামে এ সংঘর্ষে নারীসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয়। নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে সুহেলের জমি থেকে জালাল মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া শসা চুরি করে বলে অভিযোগ ওঠে। সুহেলের পরিবার দাবি করে, চুরির সময় হৃদয়কে হাতেনাতে আটক করা হয়। এরপর বিষয়টি হৃদয়ের পরিবারকে জানানো হলে হৃদয়ের পক্ষের লোকজন সুহেলের কাছে ক্ষমা চায়। তবে, হৃদয়ের পক্ষের মাতব্বর মীর্জা আলী এই 'হাত ধরে ক্ষমা চাওয়াকে' অপমানজনক মনে করেন এবং 'দেখে নেওয়ার' হুমকি দেন।
সোমবার রাতেই উভয়পক্ষের লোকজন গোষ্ঠীর মাতব্বরদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে। এর জের ধরে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
সুহেল মিয়ার পক্ষের আহতরা হলেন- জুয়েল মিয়া, সুহেল মিয়া, লুদন মিয়া, জসিম মিয়া, কাউছার মিয়া, আরমান মিয়া, সালমান মিয়া, সালাম মিয়া, তুহিন বেগম, জুনাইদ মিয়া, ফকির চান বেগম, ফারুক মিয়া, সবুজ মিয়া, মুন্না মিয়া, ইমরান হোসাইন, সফর আলী, জিহাদ মিয়া, পিন্টু মিয়া, জাফর মিয়া, সুলেমান মিয়া ও সজিব মিয়া।
অন্যদিকে, হৃদয় মিয়ার পক্ষের আহতরা হলেন- তোতা মিয়া, সরাজ মিয়া, জালাল মিয়া, ফুলজাহান বেগম, রাব্বি মিয়া, সাদেক মিয়া, সেলিম মিয়া, রজব আলী, কাউছার মিয়া, আলম মিয়া, আমীর আলী, ডালিম মিয়া, শামীমা আক্তার, ইনন মিয়া, ছফিল উদ্দিন, উত্তম মিয়া, আক্তার মিয়া, আজাদ মিয়া, নুরল হক, এনামুল হক, এনাব আলী, দুলাল মিয়া, জিলু মিয়া, সোরাব আলী, উজ্জ্বল মিয়া, মুরসালিন সরকার, রাজ্জাক সরকার, সুমন সরকার, হাফিজ মিয়া, এমরান আলী, নাবিন আলী, ফজু মিয়া, আকিক মিয়া, সাহেদ মিয়া ও নজরুল হক সরকার। আহতদের একাংশকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং অন্যরা নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হৃদয় মিয়ার পক্ষের মীর্জা আলী ও তার ছেলে রাকিবুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা শসা চুরির অভিযোগ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে তাদের পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, সুহেল মিয়ার ছেলে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হৃদয় তাদের জমি থেকে শসা চুরি করার সময় ধরা পড়ে। এরপর তার পরিবারকে জানানো হলে উল্টো হৃদয়ের পক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম জানান, শসা চুরিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনি ২০ জন আহতের খবর পেয়েছেন বলে জানান।
Comments