Image description

দেশে তুচ্ছ অভিযোগ তুলে প্রায়ই ঘটছে উচ্ছৃঙ্খল জনতার নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার ঘটনা। ঈদের মতো জাতীয় উৎসব উদযাপনেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মব। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সিনেমা প্রদর্শনে বাধা দিয়েছে স্থানীয় ‘আলেম সমাজ’। এ ছাড়া সিলেটের সীমান্তবর্তী উৎমাছড়া এলাকায় ঘটেছে পর্যটকদের বাধা দেওয়ার ঘটনা।

কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করে জাজ মাল্টিমিডিয়া। কিন্তু স্থানীয় আলেমদের আপত্তির মুখে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সেখানে সিনেমা প্রদর্শনীর এক মাসের অনুমতি থাকলেও আয়োজকরা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই শো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার হেড অব মার্কেটিং কামরুজ্জামান সাইফুল বলেন, সব জায়গা থেকে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি নেওয়া ছিল। তাও সিনেমা প্রদর্শনীতে বাধা দেয়া হয়েছে। আমি হাতজোড় করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ের আর্জি জানালাম। তবুও আলেম সমাজ অনড়। আমাকে কালই (বুধবার) চলে যেতে হবে। 

তিনি আরও জানান, ঈদের আগের দিন থেকেই স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে মাইকে ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলা হয় এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এর পর একটি মিছিলও বের করা হয়, যা স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হলে জনমনে তৈরি হয় আতঙ্ক। ঈদের দিন মানুষ না আসায় মাত্র ২০-২৫ জন দর্শক নিয়েই সন্ধ্যার শো চালু রাখা হয়। ঈদের আগেই থানায় পুলিশি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তবে থানা থেকে কোনো ধরনের সহায়তা করা হয়নি। 

বিষয়টি নিয়ে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, সব জায়গা থেকে অনুমতি নেওয়ার পরও এমন ঘটনা সিনেমা ব্যবসার জন্য হুমকি। আশা করব, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন শাখা ইমাম পরিষদের সহসভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক হযরত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, এলাকায় বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অশ্লীলতা ছড়াতে পারে– এমন আশঙ্কায় আলেম সমাজসহ স্থানীয়রা এ সিনেমা প্রদর্শনের বিপক্ষে।

কালিহাতীর ইউএনও খায়রুল ইসলাম ঈদের ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সুরাহা করা হবে।

উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা: সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের উৎমাছড়া এলাকায় গত রোববার পর্যটকদের হেনস্তা ও বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারের সঙ্গে দেখা করেছেন ঘটনায় জড়িত সংগঠন যুব জমিয়তের নেতাকর্মী। পরে ইউএনও গতকাল উৎমাছড়া এলাকা পরিদর্শন করেন। 

স্থানীয়রা জানান, গত রোববার উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের চলে যেতে বলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুব জমিয়তের সহসভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী। দলীয় কর্মীদের নিয়ে তিনি সেখানে যান। একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘উৎমাছড়া কোনো পর্যটন কেন্দ্র নয়। কেউ ছবি আপলোড করবেন না।’ আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এলাকার মুরব্বিরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি– এখানে যাতে কেউ না আসেন। আমরা সম্মানের সঙ্গে বলছি– আপনারা এখানে আসবেন না।’

এ বিষয়ে রুহুল আমিন সিরাজী বলেন, ‘কিছু মানুষ এখানে মদপান ও অশ্লীল কার্যক্রম করছেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মুরব্বি-যুবকদের নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী তারা উৎমাছড়ায় পর্যটক যেতে নিরুৎসাহিত করছেন।’

তবে এখন পর্যটকদের উৎমাছড়ায় আসতে নিষেধ করার কথা অস্বীকার করছে উপজেলা যুব জমিয়ত। তাদের দাবি, পর্যটকদের বের করে দেওয়ার জন্য নয়, বরং উৎমাছড়ায় তারা শুধু ধর্মের ‘দাওয়াত’ দিতে গিয়েছিলেন। মুফতি রুহুল আমীন সিরাজী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। পর্যটক আসুক। তবে স্থানীয়দের জন্য বিরক্তিকর কিছু যেন না হয়, সেটি তদারকির অনুরোধ করেছি প্রশাসনকে।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, এলাকাবাসী ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, কাউকে তারা বাধা দেননি। কেউ ঘুরতে গেলেও বাধা দেবেন না। সীমান্তবর্তী নিরিবিলি এলাকা হওয়ায় কিছু পর্যটক সেখানে যান। পর্যটন কেন্দ্র না হওয়ায় পোশাক পরিবর্তনের কোনো স্থান নেই। ফলে ছেলেমেয়ে ভেজা কাপড় নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় যাতায়াত করে। তা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়। তারা সেই চিন্তা থেকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।

এদিকে সোমবার বিকেলে জাফলংয়ে ভারতীয় পণ্য বিজিবিকে দেখিয়ে দেওয়ায় পর্যটকদের মারধর করেছে চোরাকারবারিরা। ওই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, জাফলং বিজিবি ক্যাম্প-সংলগ্ন একটি স্থানে পর্যটক পরিবহনে ব্যবহৃত বাসের পাশে বাগ্‌বিতণ্ডা করছেন কিছু লোক। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে চিৎকার ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়েছে।