Image description

সাভারের অনুমোদনহীনভাবে টায়ার পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে একটি কারখানা সিলগালা করেছে পরিবেশ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানে কারখানার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সোমবার দুপুরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের মোগড়াকান্দা এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় স্থানীয়দের প্রকাশ্যে হুমকি দেন ওই কারখানার মালিক ইলিয়াস। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। অভিযান পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযানের সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ইলিয়াস তাদের ডিজে পার্টি করে ‘ঘরে ঘরে হামলা’ চালানোর হুমকি দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, 'ঘনকালো ধোঁয়া আর বিষাক্ত গন্ধে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বহুদিন ধরে অভিযোগ দিয়ে আসছিলাম। আজ যখন অভিযান চালানো হচ্ছে, তখনও মালিক ইলিয়াস আমাদের গালাগালি করে হুমকি দেয়। আমরা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলতেই সে পালিয়ে যায়।'

পরিবেশ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'এই ধরনের কারখানা পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ও এয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাধ্যতামূলক। কিন্তু তারা কোনো অনুমতি না নিয়ে পরিবেশ দূষণ বিপজ্জনকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এজন্য আজ সিলগালা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।'

তিনি স্থানীয়দের হুমকি দেয়ার বিষয়ে বলেন, 'বিষয়টি স্থানীয়রা নজরে আনলে আমরা তাকে আর খুজে পাইনি। সে স্থান থেকে পালিয়ে যায়।' 

অন্যদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, মোগড়াকান্দা, হিন্দু ভাকুর্তা ও হারুলিয়া এলাকার অনেক কারখানায় একইভাবে কার্যক্রম চলছে। এসব কারখানার চারপাশে নেই কোনো সাইনবোর্ড, নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম। শ্রমিকরা মুখে মাস্ক ছাড়া, নিরাপত্তাবিহীনভাবে টায়ার পোড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।

পরিত্যক্ত টায়ারগুলো প্রায় ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে গলিয়ে প্রতি ১০ টনে তৈরি হচ্ছে ৬ টন তেল, ২ টন কার্বন এবং লোহার কাঁচামাল। এতে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ ১৬ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্যাস।

এলাকাবাসী জানায়, বছরজুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও সেগুলোর কোনো স্থায়ী সুফল পাওয়া যায় না। ভেঙে দেওয়া কারখানাগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই আবার চালু হয়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব কারখানার দূষণে শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, হুমকির মুখে পড়ছে জমির ফসল ও জীববৈচিত্র্য। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাকসবজি, ফলমূল ও মাঠের গবাদি পশু।

সূত্র জানিয়েছে, এসব কারখানার একটিও পরিবেশ অধিদফতর কিংবা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে পরিচালিত নয়। অথচ বছরের পর বছর ধরে এদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।