Image description

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও, মাড়াই যন্ত্রের (হারভেস্টার) অভাব দেখা দেওয়ায় কৃষকদের মধ্যে গভীর উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের পর মাঠ সোনালি পাকা ধানে ভরে থাকলেও, দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। ঝড় বা শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে শনিবার সাটুরিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ধানে মাঠ পরিপূর্ণ। বিগত কয়েক বছর ধরে ধান কাটার জন্য হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার বাড়লেও, এবার সেই যন্ত্রের দেখা মিলছে না। সরকার ভর্তুকি দিয়ে এই কৃষিযন্ত্রের প্রচলন করলেও, কৃষকরা বর্তমানে তার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, অন্যান্য জেলা থেকে ধান কাটার জন্য আসা দিনমজুরের সংখ্যাও এবার তুলনামূলকভাবে কম। যারা আসছেন, তারা তীব্র গরমের কারণে বেশি মজুরি দাবি করছেন। এতে করে ধান কাটার খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায়, অনেক কৃষক ঝুঁকি নিয়েও ধান কাটা শুরু করতে পারছেন না।

সাটুরিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শুধু বালিয়াটি ইউনিয়নেই সরকারি ভর্তকিতে ৫-৭টি হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতেই সেগুলো অন্য এলাকায় ধান কাটার জন্য চলে যাওয়ায়, সাটুরিয়ার কৃষকরা এখনো তার সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি আরও জানান, এ বছর ৫ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। ফলনও ভালো হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ঝড়-শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় কিছু কৃষক তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।

উপজেলার ইনাম গ্রামের কৃষক সিকিম আলী জানান, তিনি তার নিজের জমিতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মজুরি দিচ্ছেন। এর সাথে খাবারের খরচও যোগ হচ্ছে। মাড়াইয়ের জন্য আলাদা খরচ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ তার বিক্রয়মূল্যের সমান হয়ে যেতে পারে।

নওগাঁ গ্রামের কৃষক বাদল মিয়া বলেন, বাজারে ধানের তেমন চাহিদা নেই। কৃষকের হাতে ধান না থাকলে দাম বাড়লেও, সেই বাড়তি দামের সুবিধা কৃষকরা পাবেন না। কৃষকদের দাবি, সরকার সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান কিনলে তারা লাভবান হবেন। তবে সেখানেও দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।