Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাগর আহমেদ (২১)-এর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (৭ মে) আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলনের জন্য কবরস্থানে গিয়েও পরিবারের বাধায় শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে বাধ্য হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

জানা যায়, বুধবার সকাল ১১টার দিকে বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসানুল হক শিপনের নেতৃত্বে মিরপুর মডেল থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশের একটি দল নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে সাগরের কবরের কাছে পৌঁছান।

তবে, সেখানে উপস্থিত সাগরের বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও মামলার বাদী তার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শহীদ সাগরের মরদেহ কবর থেকে তুলতে স্পষ্টভাবে অসম্মতি জানান। ছেলের মরদেহ উত্তোলনের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারের এমন আবেগপূর্ণ আপত্তির মুখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসানুল হক শিপনের নেতৃত্বাধীন দলটি শেষ পর্যন্ত মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে যায়।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসানুল হক শিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে শহীদ সাগরের মরদেহ উত্তোলনের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন পর তাদের সন্তানের দেহ কবর থেকে তুলতে রাজি হননি। বিশেষ করে সাগরের বাবার কান্নার কাছে আমরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা মরদেহ  উত্তোলন না করেই ফিরে যাচ্ছি। আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি এবং পরিবারের লিখিত আপত্তি আমরা আদালতকে জানাব।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য আমরা সাগরের মরদেহ তুলতে এসেছিলাম। পরিবারের অসম্মতির কারণে আমরা ফিরে যাচ্ছি। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাগরের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলের  মরদেহ যদি কবর থেকে তুলতে হয়, তাহলে আগে আমাকে কবরে শুতে হবে, তারপর তারা মরদেহ তুলবে।’

মামলার বাদী ও সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরকে যে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা গোটা দেশের মানুষ জানে। আমরা মনে করি না তার মরদেহ ময়নাতদন্তের আর কোনো প্রয়োজন আছে। সেই কারণেই আমরা মরদেহ উত্তোলনে আপত্তি জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাগর আহমেদ। পরদিন তার মরদেহ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।