
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত 'তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা' অনুষ্ঠিত। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল— জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠনঃ তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ।
আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকিব। শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় আয়োজকরা।
প্রতিযোগিতায় পাঁচটি দল জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। উপস্থাপনায় উঠে আসে বিভিন্ন প্রস্তাবনা—সরকার সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি ক্ষমতায় আসতে পারবে না, সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর। দীর্ঘমেয়াদি শাসনের ফলে স্বৈরশাসনের ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধান সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ হওয়া উচিত। সাংসদকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করণ। এছাড়াও সাংবিধানিক সংস্কার, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বিষয়ে নানা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন প্রতিযোগীরা।
আ্যটার্নী জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের তারুণ্যের ভাবনা যেভাবে তোমরা তুলে ধরেছো, সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। আমরা রাষ্ট্রকে একটি সুসংগঠিত কাঠামোর মাধ্যমে গড়ে তুলবো। তোমরা যেভাবে সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বলেছো, বাস্তবে তা পুরোপুরি সম্ভব নয়। তবে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার মতো, সেগুলো অবশ্যই আমরা এই গঠনকাঠামোয় স্থান দেব। আমরা যে বাংলাদেশ অর্জন করেছি, সেই বাংলাদেশকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক মানুষ শহীদ হয়েছে, ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে এবং গত ১৭ বছরে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নির্বিচারে শহীদ হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা লাভ করেছি, সেটি আমাদের জন্য একটি পবিত্র আমানত।
তিনি আরও বলেন, একটি রাষ্ট্রে সু-শাসনের মেরুদণ্ড হলো সংবিধান। আর পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ছিল মদিনার সনদ। আমরা সেই চেতনা ধারণ করে এমন একটি সংবিধান গড়তে চাই, যা হবে ন্যায়, সমতা ও মানবিকতার অটুট প্রতীক-যেখানে মানুষ গর্ব করে বলতে পারবে এ সংবিধান আমাদের।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকিব বলেন, রাষ্ট্রের সকল সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো সুশিক্ষা। একটি শ্রেষ্ঠ সংবিধান অনেক খারাপ কাজকে রোধ করতে পারে, কিন্তু কেবল সংবিধান দিয়েই একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনা ও নতুন সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছে। নতুন চিন্তাকে ধারণ করতে হলে আমাদের অবশ্যই পুরাতন ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, এখানে অনেকেই পুরাতন ধারা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। সবাই ভাবে—'আগে ওরা করেছে, তাই আমরাও করব।' কিন্তু পরিবর্তনের জন্য দরকার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
তিনি বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা কেবল দেশাত্মবোধক গান শুনলেই প্রমাণ হয় না; বরং দেশের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা প্রকাশ পায় কর্মের মাধ্যমে। আজকের এই অনুষ্ঠানে জয়-পরাজয় হতেই পারে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—আমরা যেন দেশকে ভালোবেসে নিজের পরিচয়ের বদলে কাজের মাধ্যমে আমাদের অবদান রাখতে পারি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতায় পাঁচটি দল অংশগ্রহণ করেন এবং এই দলগুলোর মধ্যে বিজয়ী দল জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
Comments