
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিট প্রকল্পের গবেষণা ফান্ড বণ্টনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার গবেষণা ফান্ডের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
ইউজিসি বাস্তবায়নাধীন ‘হায়ার এডুকেশন ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার ২ হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বহন করছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের অন্যতম উপাদান শিক্ষকদের গবেষণা প্রকল্প, যার জন্য প্রায় ৩০০ প্রকল্পে ৬০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, রিভিউয়ারদের মূল্যায়নে (৯০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষণা প্রকল্প প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয় এবং টেকনিকাল ও আর্থিক বিষয় উপস্থাপনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ১০ মিনিটের উপস্থাপনার পর কোনো প্রশ্ন বা বিস্তারিত জানতে না চেয়ে প্রকল্প দুটি বাদ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আযম খান বলেন, “হিট প্রকল্পে ল্যাব ফ্যাসিলিটিস, গবেষণা বা বিভাগের উন্নয়নের জন্য ১০-১৫টি শিরোনামে প্রোপোজাল জমা দেওয়া যায়। ইউজিসি রিভিউয়ারদের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে। আমাদের বিভাগের প্রকল্প কেন বাদ গেছে, তা জানি না।”
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে সালেহ আহমেদ বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেন আমরা প্রকল্প পাইনি, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত গবেষকরাও প্রকল্প পাননি, যা রহস্যজনক। আমরা কেন বাদ পড়লাম, তা জানতে চাই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, “ইউজিসি হিট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিমাতৃসূলভ আচরণ করেছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমপক্ষে একটি করে প্রকল্প বরাদ্দ পেলেও জগন্নাথকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, সম্ভবত হিট প্রকল্প, হল ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে আন্দোলনের কারণে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “গবেষণা প্রকল্পের তালিকায় কেন নেই, তা আমি বলতে পারি না। এ বিষয়ে ইউজিসি ভালো বলতে পারবে। কেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তালিকাভুক্ত হয়নি, তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ আমাদের জানানো হয়নি।”
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তালিকায় আছে কি না, আমি জানি না। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ব্লাইন্ড রিভিউয়ের মাধ্যমে মূল্যায়নের পর প্রেজেন্টেশনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়। জগন্নাথ ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ছিল, যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো বিভাগও বাদ পড়েছে। জগন্নাথ প্রাথমিক তালিকায় থাকলেও কেন বাদ পড়েছে, তা আমি জানি না।”
Comments