তদন্তে বেরিয়ে আসছে তথ্য
চাঁদা না পেয়ে স্বাচিপ নেতাকে পুলিশে দেন রিয়াদ

রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতেনাতে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে তদন্তে। সমন্বয়ক পরিচয়ে পুলিশকে ব্যবহার করে বনানী-গুলশান-বসুন্ধরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি, এমন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার ছবি ও ভিডিও।
তদন্তে প্রকাশ, রিয়াদ ও তার সহযোগীরা গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগের দোসর অভিযোগ তুলে বিভিন্ন বাসায় হানা দিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন। পুলিশকেও ব্যবহার করে হুমকি-ধমকির মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। গত শনিবার গুলশান ২ নম্বরের ৮৩ নম্বর সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় ৪০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন রিয়াদ ও তার চার সহযোগী। এর আগে ওই বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিয়াদ গত এপ্রিলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) এক নেতার কাছ থেকে ভাটারা থানা এলাকায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চিকিৎসক দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও রিয়াদ পুরো অর্থের জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে তাকে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। পুলিশের বোঝানো সত্ত্বেও রিয়াদ টাকার দাবিতে অনড় ছিলেন। পরে ওই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। রিয়াদ পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে যেকোনো দোসরকে আটক করতে পারেন।
গুলশান থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, রিয়াদ বিভিন্ন বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর অভিযোগ তুলে পুলিশকে নিয়ে যেতেন। তবে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে পুলিশকে খবর দিতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে বনানীতে সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের বাসায় এবং মার্চ ও এপ্রিলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মব সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন তিনি। এমনকি খিলবাড়ির টেকে জমি দখলের নামে এক নারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন, যিনি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। আমিনুল কিশোর হওয়ায় রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। রিয়াদসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তদন্তে তারা শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছেন।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, “চাঁদাবাজির বিষয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
Comments