দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ কোটি টাকার দুর্নীতি: অপারেশন ছাড়াই দেখানো হয়েছে শতাধিক অপারেশন

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কাগজে-কলমে শত শত অপারেশন দেখানো হলেও বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কোনো অপারেশন হয়নি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিতরণ ও কর্মীদের মজুরি থেকে টাকা কাটার অভিযোগ উঠেছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা ওয়াহিদ তানি জানান, অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের অভাবে গত পাঁচ বছরে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “হাতে গোনা কিছু অপারেশন ছাড়া কিছুই হয়নি।” তবে সরকারি পরিসংখ্যানে প্রতি বছর শতাধিক অপারেশন দেখানো হয়েছে। পরিসংখ্যানবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, “জনবলের অভাবে অপারেশন সম্ভব নয়। স্কোর বাড়ানোর জন্য এসব তথ্য পাঠানো হয়।”
ওষুধ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৬,৫০০ পিস মন্টিলুকাস্ট-১০ ট্যাবলেট বরাদ্দ দেওয়া হলেও রোগীরা তা পাননি। ফার্মাসিস্ট ফারুক হোসেন দাবি করেন, স্টোরকিপার হুমায়ুন কবির তাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিতরণে বাধ্য করেছেন। হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করেছেন।
এ ছাড়া, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মজুরি থেকে মোটা অংক কাটা হয়েছে। সরকারি নথিতে আয়ার দৈনিক মজুরি ৪৫০ টাকা এবং সুইপারের ৫০০ টাকা হলেও, তাঁরা মাসে যথাক্রমে মাত্র ২,০০০ ও ৬,৫০০ টাকা পান। আয়া সেলিনা খাতুন বলেন, “মাস শেষে নগদ টাকা দেওয়া হয়, তাও খুব কম।”
হাসপাতালের ভেষজ বাগানের জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ টাকাও লোপাট হয়েছে, কোনো বাগানের চিহ্ন নেই। এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা, সাবেক বড়বাবু হাসান আহমেদ, বর্তমান স্টোরকিপার হুমায়ুন কবির এবং সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোস্তফা জামালের নাম উঠেছে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “অপারেশনের তথ্যে বিশাল অসঙ্গতি রয়েছে।” সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments