Image description

ঢাকার ধামরাইয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভুট্টার বাম্পার ফলনে যেন কৃষকের সুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠেছে। বৈরি আবহাওয়া না থাকায় কৃষক ভুট্রা চাষে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে ঝুঁকেছে প্রান্তিক কৃষক। এতে সফলতাও এসেছে। গ্রামের নারী পুরুষ এখন ভুট্টার ফলন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের যেন ধম ফেলার সময় নেই। প্রচন্ড রোদের মধ্যে ভুট্টা তুলতে দেখা যায় কৃষক কৃষাণীদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে  এবং  ফসলের দাম ভালো থাকায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষক। তাই স্বনির্ভরতা অর্জনে প্রান্তিক কৃষক ভুট্টা চাষে সাফল্য খুঁজছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২ হাজার ৫ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ মাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ৫ শত ৭২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ মাত্রা অনেক বেশি হয়েছে। ভুট্টা চাষে কৃষকদের প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। সব সময় খোজ খবর নিয়ে থাকেন উপজেলা কৃষি অফিস। এবার স্বর্ণালী ভুট্টা, বারি, হাইব্রিড -৬,৭,৮ চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও ভুট্টা সুব্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক পরিমাণ ভুট্টার আবাদ হয়েছে। প্রতি বছর শিল্পাঞ্চলের কারণে আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেলেও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলও প্রচুর আবাদ হয়েছে। ভুট্টা চাষে পাতা ঝলশানো বা মোচায় যদি কোন পোকার আক্রমণ হয় তাহলে কৃষক একটু সচেতন হলেই এর সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। এমনকি সব সময় কৃষি অফিস কৃষকের পাশে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে থাকেন বলে জানা যায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নেই কমবেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে। তবে রোয়াইল, সূয়াপুর, সোমভাগ, গাংগুটিয়া, বালিয়া ইউনিয়নে ভুট্টার চাষ তুলনামূলক ভাবে বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। ভুট্টা চাষে খরচ কম কিন্তু আয় বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক ধানচাষ বাদ দিয়ে ভুট্টার চাষে মনোযোগ বেশি দিয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই কম বেশি ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে। এতে ভুট্টায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। চোখে মুখে আনন্দের আমেজ বইছে। নেই বৈরি আবহাওয়া সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন ফসল। 

অপরদিকে ভুট্টার সবুজ পাতা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং ভুট্টা তুলার পর ভুট্টা গাছ লাকরি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভুট্টার কোন অংশই অকেজো নয় সবই ব্যবহার করা যায়। তাই কৃষকের আগ্রহ বেশি ভুট্টা চাষে। 

জমিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ভুট্রার গাছ। সবুজ পাতার আড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টার মোচা (ফল)। ফলন হয়েছে বাম্পার। কোথাও কোথাও উৎপাদিত ফসল ভুট্টা বাজারজাতকণ নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। ভুট্টা উৎপাদন ও বিক্রি করে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। 

ধামরাই উপজেলার উত্তরাঞ্চলে বেশি ভুট্টা আবাদ হয়েছে। অনেকেই উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে বেশ ভাল আয়ও করেছেন। 

কুশুরা ইউনিয়নের ঢালীপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, উৎপাদনে ধানের চেয়ে ভুট্টার খরচ অনেক কম। তাই  কৃষক ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আমি ৮০ শতাংশ জমিতে এই বছর ভুট্টার চাষ করেছি। ফসল ঘরে তুলা হয়ে গেছে। আমি ৮০ শতাংশ জমিতে প্রায় ৮৬ মণ ভুট্টা পেয়েছি। অপরদিকে ধানের চাষের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম। তাই কিছু জমিতে ধান লাগিয়েছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টা চাষে কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় নি। 

সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকার কৃষক নাজমুল জানান, প্রত্যেক বছরই ভাল দাম পাওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এবার ভুট্টা উৎপাদনে বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। আমি ১২০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। সম্পূর্ণ ফসল তুলা হয়নি। আশা করছি ফলন অনেক ভালো হবে। মানুষ এবার আগের তুলনায় বেশি ভুট্টার চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে ছিল ফসল ঘরে তুলতে কোন ঝামেলা করতে হয়নি। 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ধামরাই উপজেলায় চলতি বছর ২ হাজার ৫ শত ৭২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম থাকায় কৃষকরা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছে বেশি। কৃষি অফিস থেকে সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়। কখন কি করতে হবে। এখন আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এর মধ্যেই কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবে। শিল্পাঞ্চল বৃদ্ধির কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেলেও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল বালো উৎপাদন হয়েছে। কৃষকের ভুট্টা বিক্রি নিয়েও কোন চ্যালেন্জ থাকে না। অনেকে বাজারজাত করেও দিয়েছে। ভুট্টা চাষে খরচ কম হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এর রোগ ব্যাধী কম হয়ে থাকে।