
যশোর শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদা দাবির’ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে ওঠে। অভিযোগের তীর ছাত্রদলের এক নেতার দিকে, যিনি ৫-৬ জন সহযোগী নিয়ে সেখানে হানা দেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ জুন সন্ধ্যায়। সিসিটিভি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে যশোর পাউবোর পুরোনো রেস্ট হাউজের ‘কপোতাক্ষ কক্ষে’ অবস্থান করছিলেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি তার সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর ওসি সাইফুল ইসলাম বাইরে বের হন। এরপর ধস্তাধস্তি করে তাকে আবার কক্ষে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, তারা ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন এবং পরে দুই লাখ টাকায় আপসরফা হয়।
ঘটনার সময় রেস্ট হাউজে দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও কেয়ারটেকারসহ কয়েকজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘টাকা লেনদেন এবং রেস্ট হাউজ ভাঙচুরের সময় আমাকেও মারধর করা হয়।’
মিজানুর রহমান বলেন, ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। আমি নিজে দরজা খুলে দিই। কপোতাক্ষ (কক্ষ) গুছিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যাই। এরপর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাশতা আনতে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর ওসি সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বের হেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকেন।’
তবে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন বন্ধুকে নিয়ে যশোরে এসেছিলাম। ছাত্রদল নেতারা পূর্বপরিচিত, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব প্রচার চালানো হচ্ছে।’
অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা গোলাম হাসান সনি দাবি করেছেন, ‘আমরা সংবাদ পেয়ে রেস্ট হাউজে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো নারী পাইনি, ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুরোধে ওসিকে রেস্ট হাউজের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা এখন তদন্তাধীন।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
Comments