Image description

দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে স্থানীয়দের ফোনের খবরে নৌ পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। রাতে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে তাঁর ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার ও ছেলে ঋত সরকার মরদেহ শনাক্ত করেন।

বিভুরঞ্জন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কর্মস্থলের উদ্দেশে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবার রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। শুক্রবার বিকেলে নৌ পুলিশের তোলা ছবি দেখে পরিবার মরদেহ শনাক্তে মুন্সিগঞ্জে যায়।

চিররঞ্জন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, “এটি আত্মহত্যা, খুন, না পরিকল্পিত ঘটনা, আমরা জানি না। তিনি কীভাবে মারা গেলেন, তা জানতে চাই। এমন পরিণতি যেন আর কারও না হয়।”

বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে ঋত সরকার জানান, বাবার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।আমরা বিষয়টি পরিষ্কার জানতে চাই। বাবা স্বাভাবিকভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, কোনো হতাশার লক্ষণ দেখিনি।”

ঋত সরকার বলেন, ‘আমার বাবা স্বাভাবিকভাবে সব সময় শান্ত থাকতেন। তাঁর মধ্যে ব্যতিক্রম কোনো কিছু লক্ষ করিনি। হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কি না, সেটি আমরা ঠিক বলতে পারছি না। তিনি প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার সকালে খেয়ে, ইনসুলিন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে মাকে বলে গিয়েছিলেন বিকেল পাঁচটা, সাড়ে পাঁটার দিকে বাড়িতে ফিরে আসবেন। বিকেল পাঁচটার পরে যখন বাবা ফিরে আসেননি, তখন আমরা তাঁর মুঠোফোনে ফোন করি। ফোনটা বন্ধ পাই। পরবর্তীতে আমরা রমনা থানায় জিডি করি।’

ঋত সরকার বলেন, ‘বাবা পরিচিত কারও সঙ্গে আছেন কি না, নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদেরও ফোন করি। যখন নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়, তখন আমরা আরও বেশি চিন্তিত হই। তখন বেশি খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। সকালে আমাদের বাসায় পুলিশ এসেছিল। আমরা বাবার ফোনটি বাড়িতে পাই।’

শুক্রবার বিকেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিভুরঞ্জনের ‘খোলা চিঠি’ প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি সাংবাদিকতা জীবন, পারিবারিক ও আর্থিক দৈন্যদশা এবং হতাশার কথা উল্লেখ করেন। ওই চিঠি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে চিররঞ্জন সরকার বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ কারও সঙ্গে তেমন কথা বলি না। আমার ভাইয়ের একটা মেয়ে আছে। মেয়ের ঘরে একটি নাতি আছে। সেই ছোট নাতির সঙ্গে ভাই অনেক কথা বলতেন। তাই এ বিষয়টি আমরা তেমন লক্ষ করিনি।’

বিভুরঞ্জন সরকারের স্ত্রীর ভাই দীপঙ্কর সাহা চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিঠিটি তাঁরা আগে দেখেননি। যদি দেখতেন, তাঁকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না।

পুলিশ তদন্ত করছে মৃত্যুর কারণ জানতে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।