ঘরের মাঠে নতুন ফুটবল বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। হামজা চৌধুরী, শামিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলামের মতো প্রবাসী তারকাদের অভিষেক ও উপস্থিতি সমর্থকদের মধ্যে যে বিপুল আশা ও উন্মাদনা তৈরি করেছিল, শেষ পর্যন্ত তা ফিনিশিং ব্যর্থতার কারণে হতাশার জালের বুকেই ধরাশায়ী হলো। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

জাতীয় স্টেডিয়ামে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়ে এক নতুন শুরুর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণের ধারা তৈরি করে, বিশেষ করে প্রথমার্ধের প্রথম ২০ মিনিটে ফাহামিদুল ও শাকিলরা বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। অভিষেক ম্যাচে কানাডা প্রবাসী মিডফিল্ডার শামিত সোমের নিখুঁত পাস ও চমৎকার বল নিয়ন্ত্রণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা হামজা চৌধুরীও মাঝমাঠে তার প্রভাব দেখান। কিন্তু বারবার সিঙ্গাপুর রক্ষণভাগে হানা দিলেও, গোলের ফিনিশিংয়ে বারবার ব্যর্থ হন রাকিব ও অন্যরা। এই ব্যর্থতাই প্রথমার্ধে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দিতে পারেনি।

ম্যাচের ৪৫তম মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের একটি ভুলের সুযোগ নিয়ে সিঙ্গাপুরের সং উই ইয়াং গোল করে দলকে এগিয়ে দেন, যা বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৯ মিনিটে ইখসান ফান্দি গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করলে পরাজয়ের শঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়।

তবে, বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে ইংল্যান্ড-প্রবাসী হামজা চৌধুরীর দারুণ এক পাস থেকে রাকিব হোসেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে ব্যবধান কমান, যা গ্যালারিতে নতুন করে আশার সঞ্চার করে। এই গোল দর্শকদের মনে ফিরিয়ে এনেছিল ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। কিন্তু এর পরেও একাধিকবার সিঙ্গাপুরের ডি-বক্সে বল নিয়ে ঢুকলেও, চূড়ান্ত ফিনিশিংয়ের অভাব দলকে সমতায় ফিরতে দেয়নি।

কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা জামাল ভূঁইয়াবিহীন একটি রক্ষণাত্মক ৪-৪-২ ফরমেশনে দল সাজিয়েছিলেন, যেখানে কোনো প্রথাগত স্ট্রাইকার ছিল না। ফাহামিদুল এবং রাকিব উইংয়ে খেললেও, ফলস নাইন হিসেবে রাকিবের ওপর গোলের চাপ ছিল। যদিও রাকিব একটি গোল শোধ করেছেন, সামগ্রিক ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা আজকের পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দিলেও, গোল করার সহজাত ক্ষমতার অভাব দলটিকে পিছিয়ে দিল। বিপুল দর্শক সমর্থন এবং খেলোয়াড়দের নিবেদন থাকা সত্ত্বেও, গোলের সামনে মাথা ঠান্ডা রেখে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার অক্ষমতাই এই আশার ভেলায় হতাশার বাতাস হয়ে এলো।