Image description

২০২৪ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের গ্রুপে পড়েছিল ওমান। তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। তবে অংশ করেই আইসিসি থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার পেয়েছিল ওমান।

সে অর্থের প্রাপ্য ভাগ চেয়েছিলেন বলে কাশ্যপ প্রজাপতি শুধু দল থেকেই ছিটকে পড়েননি, ওমান থেকেই বের হয়ে যেতে হয়েছে! এই ব্যাটসম্যান এখন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন।

প্রজাপতি একা নন, ২০২৪ বিশ্বকাপ খেলা দলটির প্রায় সবাই এখন আর দলে নেই। প্রজাপতির মতো কয়েকজনকে ওমান ছাড়তে হয়েছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ২০ দলকে মোট ১ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়েছে আইসিস। কিন্তু ক্রিকেটারদের বৈশ্বিক সংস্থা (ডাব্লিউসিএ) বলছে, বেশ কয়েকটি ক্রিকেট বোর্ড এখনো খেলোয়াড়দের এই অর্থ থেকে প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দেয়নি।

এদের মাঝেও ব্যতিক্রম ওমান। কারণ, ২ লাখ ২৫ হাজার ডলারের কানাকড়িও যায়নি ক্রিকেটারদের কাছে। প্রজাপতি ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘এই ইস্যুতে আমাদের জীবন উল্টেপাল্টে গেছে। দলে জায়গা হারিয়েছি, আমাদের চুক্তি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, আমাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে আইসিসির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘এটা খুবই বিভ্রান্তিকর, আমরা যা আয় করেছি সে অর্থ আমরা পাচ্ছি কিনা, এটা আইসিইস কেন নিশ্চিত করতে পারে না, এটাই বুঝে আসে না। এবং কেন আমরা এ নিয়ে প্রশ্ন করতে পারি না?’

আইসিসির নিয়মানুযায়ী প্রাইজমানির পুরো অর্থ টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে স্কোয়াডের প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। আইসিসি নিশ্চিত করেছে, তারা ওমানকে সব অর্থ দিয়ে দিয়েছে কিন্তু ক্রিকেটাররা সে অর্থ এক বছরেও পাননি। 

প্রজাপতি বলেছেন, ২০২৪ বিশ্বকাপের প্রাইজমানি নিয়ে মিডিয়ার এত আলোচনাতেও তাঁর আপ্রথম জানতে পারেন, বিশ্বকাপ থেকে টাকা পাবেন ক্রিকেটাররা। তাঁর দাবি, ২০২১ বিশ্বকাপের অর্থও তাঁদের দেয়নি ওমান ক্রিকেট। কারণ, তাঁরা জানতেনই না, আইসিসি ক্রিকেটারদেরই অর্থ দেয়, বোর্ডকে না।

বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেও কোনো ফল পাননি প্রজাপতিরা। বিশ্বকাপের ৩ মাস পর কানাডায় একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে প্রথম এই প্রসঙ্গ তোলেন তাঁরা। সে দলে বিশ্বকাপ খেলা ১২ জন ক্রিকেটার ছিলেন।

ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নেওয়া নেপাল ও কানাডার ক্রিকেটাররা বলেছেন, তাঁরা অর্থ বুঝে বেশ ভুগতে হয়েছে তাঁদের। ডাব্লিউসিএ দাবি করছে, সহযোগী দেশগুলো ২০ থেকে ৭০ভাগ অর্থ দিলেও পুরো অর্থ দেয়নি কেউই। ওমান ক্রিকেটাররা এ প্রসঙ্গ তুললে টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের খেলায় মনোযোগ দিতে বলে।

টি-টোয়েন্টি এমার্জিং এশিয়া কাপের আগে আবার এ প্রসঙ্গ তোলেন ক্রিকেটাররা। এসময় অর্থ দেওয়ার নিশ্চয়তা না দিলে খেলতে অস্বীকৃতি জানান ক্রিকেটাররা। এক বোর্ড কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে, তিনি প্রত্যেক ক্রিকেটারকে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করেন, তারা খেলতে চান কিনা। ক্রিকেটাররা প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিলে খেলবেন না বলায় জানিয়ে দেওয়া, সেক্ষেত্রে তাঁদের দল থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এরপর বোর্ড থেকে হুমকি দেওয়া হয়, না খেললে নতুন ১৫ জনকে দেশ থেকে ডেকে এনে নামানো হবে মাঠে। ক্রিকেটাররা ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল ছাড়েন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের জন্য ঘোষিত দলটির মাত্র ৫ সদস্য মাঠে নেমেছিলেন। এঁদের মাত্র দুজন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন।

বিশ্বকাপ দলের বেশ কয়েকজনকে শেষ পর্যন্ত ওমান ছেড়ে যেতে হয়েছে। কারণ, ওমানে রেসিডেন্সি চাকরি ভিসার ওপর নির্ভর করে। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের চাকরি ভিসা ও অন্য চাকরি বাতিল করে দেওয়া হয়।

ওমানের হয়ে ৩০ ওয়ানডে ও ৪৭ টি-টোয়েন্টি খেলা ফাইয়াজ বাট বলেছেন, ‘আমার ক্যারিয়ার ও পেশার জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাকে ওমান ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানে আমি বেকার, কাজ খুঁজছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ।’

ডাব্লিউসিএ বলছে, সহযোগী দেশের বোর্ডগুলো আশা করে ক্রিকেটাররা যেন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয়। এবং ক্রিকেটাররা দাবি জানালে তাঁদের হুমকি দিয়ে হোক বা কিছুটা পরিশোধ করেই চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।

বোর্ড অর্থ পরিশোধ না করলে শাস্তির পরিষ্কার বিধান না থাকায় আইসিসিও খুব বেশি কিছু করতে পারছে না। ওমান ক্রিকেট আইসিসির কাছে ব্যাপারটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। ক্রিকইনফো যোগাযোগ করলেও কোনো জবাব দেয়নি তারা।