
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন, তেমনি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন যদি কোনো প্রভাবশালী শক্তির দ্বারা পরিকল্পিতভাবে ঘটে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘কিয়ামত’ সৃষ্টি হবে এবং বিএনপির অস্তিত্ব মুছে যাবে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও লাভবান হবেন। তিনি সম্প্রতি একটি টক শোতে এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩০০, ৪০০ বা ৫০০ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এগুলো কারা দিয়েছে? সবই বিএনপির লোক দিয়েছে। চাঁদাবাজি, দখলদারি—এগুলো বিএনপির লোক দিয়ে করানো হয়েছে বা তারাই করেছে। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি প্রতিদ্বন্দ্বী করে দিয়েছে, কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ড এখনো এটা বুঝতে পারেনি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, তাহলে জামায়াতকে ধরবে না, কারণ জামায়াত ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এনসিপি বলবে, ‘আমরা কচি খোকা, আমরা আপনার সন্তানের মতো।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি তার ‘ম্যাজিক্যাল স্মাইলিং ফেস’ দিয়ে হাসেন, তাহলে শেখ হাসিনা কি তার সঙ্গে রাগ করতে পারবেন? এই পরিস্থিতিতে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
রনি বলেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ দুই রূপে আসতে পারে—একটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং অপরটি শেখ হাসিনা ও শেখ পরিবার ছাড়া কোনো নতুন নেতৃত্বে। তিনি বলেন, “যদি শেখ পরিবার ছাড়া একটি পরিশ্রুত আওয়ামী লীগ গড়ে ওঠে, তাহলেও জামায়াত, এনসিপি এবং ড. ইউনূস লাভবান হবেন। বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাই হলো রাজনীতির গাণিতিক হিসাব এবং এর পরিণতি।”
তিনি ‘ডিপ স্টেট’ এর প্রভাব নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে যারা শেখ হাসিনা, ভারত বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গালাগাল করছে, তারা সবাই শেখ হাসিনা বা মোদির লোক নয়—এটা বুকে হাত দিয়ে বলা যায় না। এটাই ইন্টেলিজেন্সের নিয়ম। তারা হঠাৎ এমন কিছু বলবে, যাতে সবাই বলবে, ‘হ্যাঁ, ঠিকই তো।’ এভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন হলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
গোলাম মাওলা রনি বলেন, “যেখান থেকে মানুষের উত্থান হয়, সেখানেই পতন হয়। শেখ হাসিনার পতন জুলাই-আগস্টে হয়েছে। ড. ইউনূস ও বর্তমান সরকারের উত্থানও এই জুলাই-আগস্টে হয়েছে। তাদের পতনও এই সময়ে হবে—এই বছর, পরের বছর বা তার পরের বছর। এটা প্রকৃতির নিয়ম।” তিনি বলেন, ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টের চার্টার সম্ভব ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালে তা বাস্তবায়ন হবে না।
তিনি ড. ইউনূসের দুর্বলতা নিয়ে বলেন, “ইউনূস সব সময় দেখিয়েছেন, সারা দুনিয়া তার বন্ধু। কিন্তু এখন তার সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতা শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকলেও তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কাতারের আমিরের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়নি। এটা আগে কল্পনাও করা যেত না।”
তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলেন, “এটা আমাদের জন্য বুমেরাং হবে। তারা জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করবে, যা সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাবে। এছাড়া সমকামিতার বিষয়ে বিবিসিতে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজে এমন একজন সমকামী কর্মকর্তার নিয়োগ ধর্মপ্রাণ মানুষদের রাস্তায় নামাতে পারে। এটি দেশকে আরও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা।”
রনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় আইএসআই জঙ্গি গ্রুপের তদন্তে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সংগঠনের নাম এসেছে, যাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, “এতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের যে সুযোগ ছিল, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
Comments