Image description

পাবনার ঈশ্বরদীতে পাকশী হার্ডিঞ্জব্রিজ এলাকায় রেলওয়ের জমি দখল করে পিকনিক স্পট তৈরি করছেন ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতা। প্রথমে ছোট একটি কফিশপ বানিয়ে কৌশলে জমিটি দখলে নেন তিনি। পরে পাকা স্থাপনা বানানোর মধ্য দিয়ে পিকনিক স্পট তৈরির কাজ শুরু করেন। অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতার নাম মোক্তার হোসেন মুক্তি। তিনি উপজেলার পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। যদিও তিনি নিজেকে রেলওয়ের ঠিকাদার ও পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ান। 
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিকনিক স্পট তৈরির কাজ চলা জমিটি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের। দুই বছর আগে যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন জমিটির এক কোনায় একটি টঙ দোকান বানিয়ে দখল কাজ শুরু করেন। দিনে দিনে দোকানটির পরিধি বাড়তে থাকে। টঙ দোকান থেকে তৈরি হয় বিশাল কফিশপ। এর পর পরিধি বাড়িয়ে এখন বানানো হচ্ছে পিকনিক স্পট। ইট দিয়ে চারপাশে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে নানা স্থাপনা।
 
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, এক পাশে হার্ডিঞ্জব্রিজ, অন্যপাশে লালনশাহ সেতু। মাঝখানে কিছু ফাঁকা জায়গা। লালনশাহ সেতুতে উঠতেই ডানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিদর্শন বাংলো। বাংলোর হার্ডিঞ্জব্রিজমুখী ফটকের সামনে একটি কফিশপ। ওই কফিশপটি ঘিরেই তৈরি হচ্ছে পিকনিক স্পট। চলছে বসার বেঞ্চ, টেবিল ও ঘর তৈরির কাজ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘হার্ডিঞ্জ সেতু পিকনিক স্পট অ্যান্ড লালনশাহ কফিশপ’। 
 
এলাকাবাসীর দাবি, যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী। তিনি নিজেকে রেলওয়ের ঠিকাদার বলে দাবি করেন। প্রভাব খাটিয়ে রেলওয়ের জমিটি দখলে নিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে হার্ডিঞ্জব্রিজ এলাকার নিরাপত্তায় নির্মাণাধীন পিকনিক স্পটের মাত্র ১০০ গজ দূরেই একটি পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান। দখলের বিষয়টি দেখে কিছু বলেছে না নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ।
 
এসব বিষয়ে সাবেক যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন মুক্তি বলেন, আমার বাবা প্রয়াত আবদুস ছাত্তার মোল্লার নামে ৯৯ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে এই জমি লিজ নেওয়া আছে। পাকশী রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডিং পদে চাকরি করতেন তিনি। বাবা বেঁচে থাকাকালে এখানে লালনশাহ সেতুর নিচে লিচু বাগানসহ এই জায়গা আমরা দেখভাল করছি। প্রতিদিন শত শত মানুষ হার্ডিঞ্জব্রিজ, লালনশাহ সেতু ও রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে আসেন। কিন্তু সেখানে তাদের বসার বা ওয়াশরুমে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই পর্যটকদের কথা ভেবে জনস্বার্থে এই কফিশপ ও পিকনিক স্পটটি তৈরি করছি। 
 
এ সময় রেলওয়ের জমি ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা বলেন, লিজ তো আগেই নেওয়া আছে আমার বাবার নামে। আর এই কাজের জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুতই অনুমতি পেয়ে যাব। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল বলেন, হার্ডিঞ্জব্রিজ এলাকায় কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর পিকনিক স্পটের জন্য অনুমতি আমরা দিই না। ওই যুবলীগ নেতার বাবার নামে লিজ নেওয়া আছে-এ বিষয়টি জানা আছে কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার বাবার নামে কোনো লিজ আছে কি না আমার জানা নেই। তবে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। শিগগিরই ওই স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে। 
 
ঈশ^রদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, হার্ডিঞ্জব্রিজ অবকাঠামোর নিরাপত্তার বিষয়টি পাকশী ফাঁড়ির সদস্যরা দেখভাল করেন। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব রেলওয়ের। এরপরও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট দফতর অথবা বিভাগ আমাদের জানালে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
 
এসব ব্যাপারে পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মোক্তার হোসেন সাবেক ইউনিয়ন যু-বলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধ কিছু করলে সেই দায়িত্ব তার নিজের, যুবলীগের নয়।