Image description

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপি নেতার বাঁধায় অনাবাদি পড়ে আছে মসজিদের ১৫ একর চাষের জমি। উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া তালুকদার বাড়ী জামে মসজিদের এ জমি মৌসুমের শেষ পর্যায়েও চাষাবাদ করতে না পেরে প্রতিকার চেয়ে থানা পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন ফল হয়নি। এতে বিপুল পরিমান খাদ্য উৎপাদন ব্যহত সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ নিয়ে কারো যেন কিছু করার নেই। 

তবে অভিযুক্ত ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির সাফ কথা, এবছরও জমি খিল থাকবে। আর পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, জমি জায়গা সংক্রান্ত বিষয় পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত, এটি আদালতের এখতিয়ারভূত বিষয়। তবে এ নিয়ে যদি কোন ফৌজদারী অপরাধ সংঘঠিত হয় সে বিষয়ে আমরা আইনী পদক্ষেপ নেবো।

সূত্র জানায়, উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মৌজার এসএ ৩৩ নম্বর খতিয়ানের ১৫.৮০ একর জমি ২৭ নভেম্বর ১৯৫৬ রেজি:কৃত ৬৯৪২ নম্বর ওয়াকফা দলিল মূলে ইসলামিক খেদমতে অনুপ্রানিত হয়ে চালিতাবুনিয়া তালুকদার বাড়ী জামে মসজিদের বরাবর হস্তান্তর করে দেন দানবীর সফিজ উদ্দিন হাওলাদার। যা কৃষ্ণপুর-১৮ মৌজার ৪ নম্বর খতিয়ানের ৯২, ৯৩, ১৪৫, ১৪৬, ৩৬, ৭৫, ১৮৭, ১০ নম্বর দাগে ১৪.৬৩ একর জমি পক্ষে মোতওয়াল্লি হিসেবে বিএস ভুক্ত করে ভূমি প্রশাসন। এটি ওয়াকফা এষ্টেট ভুক্ত হয়েছে, ইসি নম্বর ১৬১১৭, তারিখ ২৭ নভেম্বর ১৯৫৭। 

প্রায় ৭০ বছর ধরে মসজিদের এ জমির আয় থেকে ধর্মপ্রান মুসুল্লীদের জন্য মসজিদ উন্নয়নে ব্যয় হয়ে আসছিল। গত বছর এ জমির চাষাবাদ করতে গেলে ব্যপক সংঘর্ষে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ফলে মসজিদের জমি অনাবাদি থাকে। এবছর মৌসুম শেষেও বিএনপি নেতার বাঁধায় চাষাবাদ করা যায়নি। এতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ধানখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীন কৃষ্ণপুর-১৮ মৌজার ৪ নম্বর খতিয়ানের ৯২, ৯৩, ১৪৫, ১৪৬, ৩৬, ৭৫, ১৮৭, ১০ নম্বর দাগে ১৪.৬৩ একর জমি চালিতাবুনিয়া তালুকদার বাড়ী জামে মসজিদ পক্ষে মোতওয়াল্লী নামে মালিকানা রয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বকেয়া সহ ৩২ হাজার ১৪০ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর ১২ মে ২০২৫ পরিশোধ করা হয়েছে। দাখিলাটি গুগল স্ক্যান করে প্রাথমিক ভাবে মসজিদের জমি নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।    

মসজিদ কমিটির সদস্য মো. আতিকুর রহমান পিন্টু বলেন, 'মোতওয়াল্লি কর্তৃক পরিচালিত মসজিদের জমি চাষাবাদের জন্য ইউএনও বরাবরে আবেদন করার পর চেয়ারম্যান, চম্পাপুরকে ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইউএনও স্যার লিখে দেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার মেলেনি।’ 

পিন্টু আরও বলেন, 'জমির অবস্থান নজরুল খাঁদের বাড়ীর পাশে হওয়ায় তারা আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েও তাদের পক্ষে রায় না পাওয়ায় পেশী শক্তির জোরে মসজিদের জমি দখলে নিতে চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না।’

এ বিষয়ে চম্পাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি মো. নজরুল খাঁ বলেন, 'ওই জমি আমাদের। জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে। আওয়ামীলীগ আমলে বাটু তালুকদার, আল-আমিন তালুকদাররা জোর করে ভোগ দখল করেছে। এখন জমির বুঝ না পাওয়া পর্যন্ত জমি খিল থাকবে।’

উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদার বলেন, 'মসজিদের নামের জমি। উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। নজরুল খাঁ আদালতের মামলা কিংবা জমির মালিকানা দাবী করলেও কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারে নাই। প্রাথমিক ভাবে মসজিদের মালিকানা স্পষ্ট। এ বিপুল পরিমান জমি চাষাবাদ করা দরকার। প্রয়োজনে বর্গাদার দিয়ে চাষাবাদ করার উদ্দোগ নেবো।’

কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুযেল ইসলাম বলেন, 'জমি জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। যা পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত, এটি আদালতের এখতিয়ারভূত বিষয়। গতবছর এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যাতে মরিচের গুড়া পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। ফৌজদারী মামলা হয়। এবছরও যদি কোন ফৌজদারী অপরাধ সংঘঠিত হয় সে বিষয়ে আমরা আইনী পদক্ষেপ নেবো।’

কলাপাড়া ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ইয়াসীন সাদেক’র কাছে এ বিষয়ে জানতে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা  যায়নি।