
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) আজিজুল হক হল সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছেন। তিনি হলের এক দোকানিকে জরিমানা করা এবং ক্যান্টিনের খাবারের মান ও কর্মচারীদের পোশাক নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
গত শুক্রবার আজিজুল হক হলের এক দোকানিকে ‘টেস্টিং সল্ট’ রাখার অভিযোগে ৩,০০০ টাকা জরিমানা করেন। এর দুদিন পর, রোববার তিনি হলের ক্যান্টিন মালিককে খাবারের মান উন্নত করতে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। এ সময় তিনি বলেন, “৪২ বছর ধরে ক্যাফেটেরিয়া চালাচ্ছেন, অথচ শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম উন্নয়নও দেখেনি। তাহলে আপনাদের রাখা হবে কেন? কর্মচারীরা যখন স্বাস্থ্যবিধি মানে না, হাফ প্যান্ট পরে রান্না করে, রান্নাঘরে সিগারেট খায়— তখন এর দায় ম্যানেজারের। ১৫ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনুন, না হলে দায়িত্ব ছাড়তে মানসিক প্রস্তুতি নিন।”
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এবারের হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলের মধ্যে শুধু ছাত্রদল প্যানেল দিয়েছিল, বাকিরা ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিজয়ীদের অধিকাংশের প্রতি ছাত্রশিবিরের সমর্থন ছিল বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুহা. মহিউদ্দিন খান বলেন, “ছেলেদের হলে যারা জয়ী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। তবে আমরা কয়েকটি জায়গায়, যেখানে আমাদের নেতাকর্মী দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছি। ফলে আমাদের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের অধিকাংশ বিজয়ী হয়েছেন।” আজিজুল হকের প্রতিও ছাত্রশিবিরের সমর্থন ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মির্জা গালিব ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, “এটা সমস্যা সমাধানের কোনো পদ্ধতি না। এসব ফাটাকেস্ট টাইপের রোল সিনেমাতেই হয়। বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য সিস্টেমের কী কী পরিবর্তন দরকার, সেইটা নিয়ে হোমওয়্যার্ক করতে হয়, ইমপ্লিমেন্টেশন পদ্ধতিও প্রফেশনাল হইতে হয়। নয় তো সাস্টেনেইবল কোনো পরিবর্তন আসে না। সস্তা জনপ্রিয়তা বা ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কোনো কাজ করা উচিত না।”
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবুল মিশকাত বলেন, “আমরা দেখছি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হলের খাবারের মান খুবই খারাপ। এতে আজিজ ভাই যা করেছেন, তা ঠিক আছে। তবে তিনি তো জরিমানা করার কেউ না। তিনি আবার বলছেন, হলের কর্মচারীদের টাখনুর উপর প্যান্ট পরে কাজ করতে। এখানে খাবারের মানের সঙ্গে টাখনুর সম্পর্ক কী, আমি জানি না।”
অন্যদিকে, শিক্ষার্থী রিদওয়ান মানসুর বলেন, “খাবারের শুধু স্বাদ নয়, পরিবেশও সমান গুরুত্ব বহন করে। একজন মানুষ যদি খেতে বসে সেখানে হাফ প্যান্ট পরা কাউকে ঘুরে বেড়াতে দেখেন, তাহলে অস্বস্তি লাগটা স্বাভাবিক। সেটা বিবেচনা করে আজিজ ভাই ভালো করেছেন।”
এ বিষয়ে আজিজুল হক বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকে ভোট দিয়েছে, বোতল হয়ে বসে থাকার জন্য না। আচার-আচরণে আরও সংযত হব এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দায়িত্বের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যাব।”
তবে, হল সংসদের ভিপি কাউকে জরিমানা করার এখতিয়ার রাখেন কি না, এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “জরিমানা তো তারা করতে পারে না। তারা বিষয়গুলো অবশ্যই দেখভাল করবে। কিন্তু যা করবে, হল প্রশাসনের মাধ্যমে করবে।”
আজিজুল হকের এই পদক্ষেপ ক্যাম্পাসে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
Comments