Image description

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিকে একটি ‘সুপরিকল্পিত মাস্টার প্ল্যানের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সোমবার বিকালে বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় একটি অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, “আজকে অনেকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের (পিআর) দাবি তুলছেন। কেউ কেউ বলছেন, পিআর না হলে তুমুল আন্দোলন হবে। আমি মনে করি, এই বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া একটি সুপরিকল্পিত মাস্টার প্ল্যানের অংশ। এটা কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।”

কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা গত ১৬-১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন, ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোও আন্দোলন করেছে। তখন তো এই পিআর প্রসঙ্গ তোলেননি। এখন এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন? এলাকার মানুষ যদি তাদের প্রতিনিধিকে আগে থেকে না চেনেন, তাহলে বিভ্রান্তিতে পড়বেন। উদাহরণস্বরূপ, জুনায়েদ আল হাবিব যদি কোনো এলাকা থেকে দাঁড়ান, তিনি যদি সেই এলাকায় আগে পরিচিত না হন, তাহলে মানুষ তাকে কীভাবে চিনবে? তার পরিচয় কী?”

তিনি আরও বলেন, “এই দেশ হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া, নেসার আলী তিতুমীরের দেশ। তাদের রক্তপাত ও শহীদি আত্মদানের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। এখানে ইসলাম, মাদ্রাসা বা ইসলামী শিক্ষাকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা বারবার ইসলামী শিক্ষা ও আলেমদের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরির চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি।”

অনুষ্ঠানে রিজভীর নেতৃত্বে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর একটি প্রতিনিধি দল ক্যান্সারে আক্রান্ত মাওলানা এনামুল হাসান ফারুকীর সঙ্গে দেখা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মাওলানা ফারুকীকে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। রিজভী আলেম সমাজের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ সময় হেফাজতে ইসলামের মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতি জাবের কাসেমী, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমুদী, হাফেজ মাওলানা নূর মোহাম্মদ, মুফতি জাকির হোসেন কাসেমী, মাওলানা সালেহ আহমদ আজম ও মুফতি এনায়েত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ডাকসু-জাকসু নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ

রিজভী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে দেখেছি, পরাজিত শক্তির সমর্থকরা একটি ছাত্র সংগঠনকে ভোট দিয়েছে। এটা কেন হচ্ছে? এটি কোনো ভালো লক্ষণ নয়। যদি পরাজিত শক্তি কোনোভাবে ফিরে আসে, তবে তা সবার জন্য দুঃখজনক হবে। যারা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে গোপনে এই শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে, তা কারও জন্য মঙ্গলদায়ক হবে না। এই পরাজিত শক্তির পেছনে একটি বৃহত্তর শক্তি রয়েছে, যারা ইসলামকে সহ্য করে না এবং বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব চায় না।”

মাওলানা ফারুকীর পাশে বিএনপি

প্রতিনিধি দলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে জিয়া পরিবারের ঐতিহাসিক ও আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই সূত্র ধরে আমরা মাওলানা এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছি।”

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে মোদী বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মাওলানা ফারুকীর বিরুদ্ধে ১৬টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২৪ দিনের রিমান্ডে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। চিকিৎসাবিহীন দেড় বছর কারাভোগের ফলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আশরাফ উদ্দিন বকুল, আবুল কাশেম, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, মোকছেদুল মোমিন মিথুন ও সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি।